Saturday, September 10, 2011

হাদিস

শব্দের পরিচিতিঃ আরবী "সিয়াম" শব্দটি "সওম" শব্দের বহুবচন এবং এটি একটি কুরআনিক শব্দ। উপমহাদেশে এটি "রোজা" নামেই বেশী পরিচিত যা একটি ফারসী শব্দ। "সওম" এর শাব্দিক অর্থ হলো বিরত থাকা, আত্ন সংযম এবং কঠোর সাধনা। যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করে তাকে "সাঈম" বলা হয়। সকল ক্ষেত্রে রোজা শব্দটি পরিহার করে সিয়াম শব্দটি ব্যবহার করা আমাদের জন্য উত্তম।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ক্বদরের রাত অনুসন্ধান করতে চায় সে যেন (রামাদানের) শেষ দশকে তা অনুসন্ধান করে। [মুসলিম, ২৬৩২]

হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রামাদানের শেষ দশকে ইবাদাতের জন্য যেরকম কঠোর সাধনা করতেন অন্য কোন সময়ে এটা করতেন না। [মুসলিম, ২৬৫৪]

নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি রামাদানে ঈমানের সাথে সওয়াব লাভের আশায় সাওম পালন করে তার পূর্ববর্তী গুনাহ সমূহ মাফ করে দেয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল ক্বাদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে তার পূর্ববর্তী গুনাহ সমূহ মাফ করে দেয়া হয়। [বুখারী, ১৮৮৭]

আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রামাদানের শেষ দশকে ই'তিকাফ করতেন এবং বলতেন, তোমরা রামাদানের শেষ দশকে লাইলাতুল কাদ্‌র তালাশ করো। [বুখারী, ১৮৯৩]

যখন রামাদানের শেষ দশক আসত তখন নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশী বেশী ইবাদাতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত্র জেগে থাকতেন ও পরিবার পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। [বুখারী, ১৮৯৭]

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যখন তোমাদের কেউ রোযা রাখে তখন সে যেন খেজুর দ্বারা ইফ্‌তার করে। আর যদি সে খেজুর না পায় তবে পানি দ্বারা ইফ্‌তার করে, কারণ পানি পবিত্র। [আবূ দাউদ, ২৩৪৭]

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, যদি কোন ব্যাক্তি সওম পালনরত অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি করে তার জন্য কাযা আদায় করা জরুরী নয়। অবশ্য যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে সে যেন কাযা আদায় করে। [আবূ দাঊদ, ২৩৭২]

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি হাদিসে উল্লেখ করেন, নিশ্চই সওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহ্‌র কাছে মিস্‌কের গন্ধের চাইতেও উৎকৃষ্ট। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, সে আমার জন্যই আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সিয়াম আমার জন্যই। তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই দান করবো। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুন। [বুখারী, ১৭৭৩]

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা সেহ্‌রী খাবে কারণ, সেহ্‌রীতে বরকত রয়েছে।[মুসলিম, ২৪১৫]

তিনি আরোও বলেন, আমাদের রোযা আর ইহুদী ও খৃষ্টান সম্প্রদায়ের রোযার মধ্যে পার্থক্য হলো সেহ্‌রী খাওয়া। [মুসলিম, ২৪১৬]

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, লোকেরা যতদিন যাবত ওয়াক্‌ত হওয়া মাত্র ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যানের উপর থাকবে। [বুখারী, ১৮৩৩]

একদা নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট জনৈক ব্যক্তি আগমন করে বলে, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি রোযা থাকা অবস্থায় ভুলবশত পানাহার করে ফেলেছি। তিনি বলেন, আল্লাহ্‌ তাআলা তোমাকে পানাহার করিয়েছেন অর্থাৎ এতে রোযা নষ্ট হয়নি। [আবূ দাউদ, ২৩৯০]

সেহ্‌রী খেতে খেতে আযান হয়ে গেলেও পাত্রের খাবার শেষ করা সুন্নাত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যখন ফজরের আযান শ্রবণ করে আর এ সময়ে তার হাতে খাদ্যের পাত্র থাকে, যে যেন আযানের কারণে খাদ্য গ্রহণ বন্ধ না করে- যতক্ষন না তদ্বারা স্বীয় প্রয়োজন পূর্ণ করে। [আবূ দাউদ, ২৩৪২]

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যখন তোমাদের কেউ রোযা রাখে তখন সে যেন খেজুর দ্বারা ইফ্‌তার করে। আর যদি সে খেজুর না পায় তবে পানি দ্বারা ইফ্‌তার করে, কারণ পানি পবিত্র। [আবূ দাউদ, ২৩৪৭] রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহ্‌র কোন প্রয়োজন নেই। [বুখারী, ১৭৮২]

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রামাদানে সিয়াম পালন করবে তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করা হবে। [বুখারী, ১৭৮০ অংশবিশেষ]

হযরত উসমান (রা) যখন কোন কবরের সামনে দাঁড়াতেন তখন তিনি খুবই কাঁদতেন, এমনকি তার দাঁড়ি ভিজে যেত। তাকে বলা হলো, আপনার কাছে জান্নাত-জাহান্নামের কথা বলা হলে আপনি কাঁদেন না অথচ এই ক্ষেত্রে এত কাঁদেন কেন ? তখন তিনি বললেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আখিরাতের মঞ্জিল সমূহের প্রথম মঞ্জিল হলো কবর। যে ব্যক্তি এখানে মুক্তি পেয়ে যাবে তার জন্য পরবর্তী মঞ্জিল সমূহ আরোও সহজ হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি এখানে মুক্তি পাবে না তার জন্য পরবর্তী মঞ্জিল গুলো আরোও কঠিন হয়ে যাবে। তিনি আরোও বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি এমন কোন দৃশ্য কখনও দেখিনি যার থেকে কবর আরো ভীতিকর নয়। [তিরমিযী, ২৩১১]

No comments:

Post a Comment