Wednesday, December 12, 2012

ইখলাস

ইখলাস হল আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চাবিকাঠি।

আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন তিনি রাসুল (সাঃ) কে বলতে শুনেছেন-

কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম এমন এক ব্যক্তির ব্যপারে ফয়সালা হবে যে শহীদ হয়েছিল। তাকে আনা হবে এবং তাকে যেসব সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল তা পেশ করা হবে। সে তা চিনতে পারবে। আল্লাহ তা’য়ালা তাকে জিজ্ঞেস করবেন, ‘আমি যে সমস্ত নিয়ামত তোমাকে দিয়েছিলাম, তার বিনিময়ে তুমি কি কাজ করেছ?’ সে বলবে, আমি আপনার পথে লড়াই করে শহীদ হয়েছি। তিনি বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি এজন্য লড়াই করেছ যে, লোকেরা তোমাকে বীর বাহাদুর বলবে! আর তা বলাও হয়েছে। অতঃপর তার সম্বন্ধে নির্দেশ দেওয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে টেনে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

অতঃপর আরেক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, সে ইলম অর্জন করেছে, তা লোকদের শিক্ষা দিয়েছে আর কুরআন পাঠ করেছে। তাকে উপস্থিত করা হবে এবং তাকে দেওয়া সুযোগ সুবিধা গুলোও তার সামনে তুলে ধরা হবে। সে তা দেখে চিনতে পারবে। তুমি তোমার নিয়ামতের কি সদ্ব্যাবহার করেছ? সে বলবে আমি ইলম অর্জন করেছি, লোকদের তা শিক্ষা দিয়েছি এবং আপনার সন্তুষ্টির জন্য কুরআন পাঠ করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা কথা বলছ। বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে বিদ্যা অর্জন করেছিলে যে, লোকেরা তোমাকে আলেম না বিদ্বান বলবে, এবং কুরআন এই জন্য পাঠ করেছিলে যে, তোমাকে ‘ক্বারী’ বলা হবে। আর তা বলাও হয়েছে। অতঃপর তার সম্বন্ধে নির্দেশ দেওয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে টেনে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

অতঃপর আরেক ব্যক্তিকে আনা হবে, তাকে আল্লাহ অজস্র ধন দৌলত দান করেছেন এবং নানা প্রকারের ধন সম্পদ দিয়েছেন। তাকে দেওয়া সুযোগ সুবিধা গুলোও তার সামনে তুলে ধরা হবে। সে তা দেখে চিনতে পারবে। আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন, তোমার এ সম্পদ দ্বারা তুমি কি কাজ করেছ? সে বলবে, যেখানে ব্যায় করলে আপনি সন্তুষ্ট হবেন এমন কোন খাত আমি বাদ দেইনি বরং সেখানেই খরচ করেছি আপনার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে। মহান আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি এই জন্য দান করেছ যে, লোকেরা তোমাকে দাতা বলবে। আর তা বলাও হয়েছে। অতঃপর তার সম্বন্ধে নির্দেশ দেওয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে টেনে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।(সহীহ মুসলিমঃ ৪৭৭১ ইফা)

Sunday, November 18, 2012

মুহাররম ও আশুরা


إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِندَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْراً فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ مِنْهَآ أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ. التوبة:36

"নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি, আসমাসমূহ ও পৃথিনী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মনিত।" (সূরা তাওবা: ৩৬)


এটা অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ মাস। কুরআনের ভাষায় এটি ‘আরবাআতুন হুরুম’-অর্থাৎ চার সম্মানিত মাসের অন্যতম। এ মাসে রোযা রাখার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

"أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ. حَدِيثٌ صَحِيحٌ/ أَخْرَجَهُ مُسْلِمٌ."

‘রমযানের পর আল্লাহর মাস মুহাররমের রোযা হল সর্বশ্রেষ্ঠ।’ – (সহীহ মুসলিম)

এর মধ্যে আশুরার রোযার ফযীলত আরও বেশি। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন:

"رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَحَرَّى صِيَامَ يَوْمٍ فَضَّلَهُ عَلَى غَيْرِهِ إِلَّا هَذَا الْيَوْمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَهَذَا الشَّهْرَ يَعْنِي شَهْرَ رَمَضَانَ." حَدِيثٌ صَحِيحٌ/ رواه البجاري.

‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমযান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোযা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি।’ – (সহীহ বুখারী)

হযরত আলী (রা:) কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিল, রমযানের পর আর কোন মাস আছে, যাতে আপনি আমাকে রোযা রাখার আদেশ করেন? তিনি বললেন, এই প্রশ্ন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জনৈক সাহাবী করেছিলেন, তখন আমি তাঁর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘রমযানের পর যদি তুমি রোযা রাখতে চাও, তবে মুহররম মাসে রাখ। কারণ, এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহ তাআলা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন।’- জামে তিরমিযী অন্য হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোযার কারণে আল্লাহ তাআলা অতীতের এক বছরের (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।’ (সহীহ মুসলিম; জামে তিরমিযী) আশুরার রোযা সম্পর্কে এক হাদীসে আছে যে,

"صُومُوا يَوْمَ عَاشُورَاءَ، وَخَالِفُوا فِيهِ الْيَهُودَ، صُومُوا قَبْلَهُ يَوْمًا، أَوْ بَعْدَهُ يَوْمًا."

‘তোমরা আশুরার রোযা রাখ এবং ইহুদীদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে; আশুরার আগে বা পরে আরো একদিন রোযা রাখ।’ (মুসনাদে আহমদ)

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে ৯ তারিখেও অবশ্যই রোযা রাখব।’ – (সহীহ মুসলিম)

Thursday, November 15, 2012

সহীহ্ মুসলিম: ৮

উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন,
একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসেছিলাম,
এমন সময় হঠাৎ এক ব্যক্তি আমাদের সামনে উপস্থিত হয়, যার কাপড় ছিল ধবধবে সাদা, চুল ছিল ভীষণ কালো; তার মাঝে ভ্রমণের কোন লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছিল না। আমাদের মধ্যে কেউ তাকে চিনতে পারে নি।
সে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে গিয়ে বসে, নিজের হাঁটু তার হাঁটুর সঙ্গে মিলিয়ে নিজের হাত তার উরুতে রেখে বললেন:
“হে মুহাম্মাদ, আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন”।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “ইসলাম হচ্ছে এই- তুমি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল, সালাত প্রতিষ্ঠা কর, যাকাত আদায় কর, রমাদানে সওম সাধনা কর এবং যদি সামর্থ থাকে তবে (আল্লাহর) ঘরের হজ্জ কর।”

তিনি (লোকটি) বললেন: “আপনি ঠিক বলেছেন”।

আমরা বিস্মিত হলাম, সে নিজে তার নিকট জিজ্ঞাসা করেছে আবার নিজেই তার জবাবকে ঠিক বলে ঘোষণা করছে।

এরপর বলল: “আচ্ছা, আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন”।

তিনি (রাসূল) বললেন: “তা হচ্ছে এই- আল্লাহ্, তাঁর ফিরিশ্‌তাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ ও আখেরাতর উপর ঈমান আনা এবং তাকদীরের ভাল-মন্দের উপর ঈমান আনা।”

সে (আগন্তুক) বলল: “আপনি ঠিক বলেছেন”।
তারপর বলল: “আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন”।

তিনি বলেন: “তা হচ্ছে এই- তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত কর যেন তুমি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছ, আর তুমি যদি তাঁকে দেখতে নাও পাও তবে তিনি তোমাকে দেখছেন”।

সে (আগন্তুক) বলল: “আমাকে কেয়ামত সম্পর্কে বলুন”।

তিনি (রাসূল) বললেন: “যাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে সে জিজ্ঞাসাকারী অপেক্ষা বেশী কিছু জানে না”।

সে (আগন্তুক) বলল: “আচ্ছা, তার লক্ষণ সম্পর্কে বলুন”।

তিনি (রাসূল) বললেন: “তা হচ্ছে এই- দাসী নিজের মালিককে জন্ম দেবে, সম্পদ ও বস্ত্রহীন রাখালগণ উঁচু উঁচু প্রাসাদে দম্ভ করবে”।

তারপর ঐ ব্যক্তি চলে যায়, আর আমি আরো কিছুক্ষণ বসে থাকি। তখন তিনি (রাসূল) আমাকে বললেন:
“হে উমার, প্রশ্নকারী কে ছিলেন, তুমি কি জান?

আমি বললাম: “আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল অধিক ভাল জানেন”।

তিনি বললেন: “তিনি হলেন জিবরীল। তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দিতে তোমাদের কাছে এসেছিলেন।”

[সহীহ্ মুসলিম: ৮]

Sunday, November 11, 2012

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালোবাসা

আলী ইবন আবী তালেব [রা]-কে জিজ্ঞেস করা হলো :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আপনাদের ভালোবাসা কেমন ছিল? তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, তিনি আমাদের কাছে প্রিয়তর ছিলেন আমাদের সম্পদ, সন্তান ও পিতা-মাতা থেকে। তিনি আমাদের কাছে তীব্র পিপাসায় ঠান্ডা পানি চেয়েও বেশি প্রিয় ছিলেন।  [কাযী ‘ইয়াদ, আশ-শিফা : ৫৬৭/২]


তিন জন ব্যতীত আর কেউই দোলনায় কথা বলেননি

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, (বানী ইসরাঈলের) তিন জন ব্যতীত আর কেউই দোলনায় কথা বলেননি।

(ক) ঈসা ইবনু মারিয়াম এবং
(খ) ছাহেবে জুরায়জ।

জুরায়জ একজন আবেদ বান্দা ছিলেন। নিজের জন্য একটি ইবাদতখানা তৈরী করে তিনি সেখানেই বসবাস করছিলেন। তার মা সেখানে আসলেন। তিনি এই সময় ছালাত পড়ছিলেন। তার মা বললেন, হে জুরায়জ! তখন তিনি (মনে মনে) বললেন, হে রব! আমার ছালাত ও আমার মা। জুরায়জ ছালাতেই মগ্ন থাকলেন। তার মা চলে গেলেন। তার মা পরের দিন আসলেন। তিনি এবারও ছালাতে রত ছিলেন। তাকে তার মা ডাকলেন, হে জুরায়জ! তিনি (মনে মনে) বললেন, হে রব! আমার মা ও আমার ছালাত। তিনি ছালাতেই মগ্ন থাকলেন। পরের দিন এসেও মা তাকে ছালাতে মগ্ন দেখলেন। তিনি ডাকলেন, হে জুরায়জ! জুরায়জ বলেন, হে আল্লাহ! আমার মা ও আমার ছালাত। তিনি তার ছালাতেই রত থাকলেন। তার মা বললেন, হে আল্লাহ! তুমি একে ব্যভিচারী নারীর চেহারা না দেখা পর্যন্ত মৃত্যু দিও না। বানী ইসরাঈলের মাঝে জুরায়জ ও তার ইবাদতের চর্চা হ’তে লাগল। এক যিনাকারী নারী ছিল। সে উলে¬খযোগ্য রূপ-সৌন্দর্যের অধিকারিণী ছিল। সে বলল, যদি তোমরা বল তবে তাকে (জুরায়জকে) আমি বিভ্রান্ত করতে পারি। সে তাকে বিরক্ত করতে লাগল, কিন্তু সেদিকে তিনি (জুরায়জ) লক্ষ্যই করলেন না। তারপর মহিলাটি তার ইবাদতখানার নিকটবর্তী এলাকায় এক রাখালের নিকট আসল। নিজের উপর তাকে সে অধিকার দিল এবং উভয়ে ব্যভিচারে লিপ্ত হ’ল। এতে করে সে গর্ভধারণ করল। সে সন্তান জন্ম দিয়ে বলল, এটা জুরায়জের সন্তান। বানী ইসরাঈলরা (রাগান্বিত হয়ে) জুরায়জের নিকট এসে তাকে ইবাদতখানা থেকে বাইরে নিয়ে আসল, ইবাদতখানাটি ধ্বংস করে দিল এবং তাকে মারধর করতে লাগল। জুরায়জ বললেন, তোমাদের কি হয়েছে? তারা বলল, এই নারীর সাথে তুমি ব্যভিচার করেছ। ফলে একটি শিশু জন্ম নিয়েছে। তিনি বললেন, শিশুটি কোথায়? তারা শিশুটিকে নিয়ে আসল। জুরায়জ বললেন, আমাকে একটু সুযোগ দাও, ছালাত পড়ে নেই। অতঃপর তিনি ছালাত পড়লেন। ছালাত শেষে তিনি শিশুটির নিকট এসে তার পেটে খোঁচা মেরে প্রশ্ন করলেন, হে শিশু! তোমার জন্মদাতা কে? সে বলল, অমুক রাখাল আমার পিতা। তখন উপস্থিত ব্যক্তিরা জুরাইজের দিকে আকৃষ্ট হ’ল এবং তাকে চুমু দিতে লাগল। তারা বলল, আমরা এখন তোমার ইবাদতখানাটি স্বর্ণ দিয়ে তৈরী করে দিচ্ছি। তিনি বললেন, প্রয়োজন নেই, বরং আগের মতো মাটি দিয়েই তৈরী করে দাও। তারপর তার ইবাদতখানাটি তারা আবার নির্মাণ করে দিল।

(গ) একটি বাচ্চা তার মায়ের দুধ পান করছিল। একটি লোক এমন সময় সেখান দিয়ে দ্রুতগামী ও উন্নত মানের একটি জন্তুযানে সওয়ার হয়ে যাচ্ছিল। তার পোশাক-পরিচ্ছদও ছিল উন্নত মানের। শিশুটির মা বলল, হে আল্লাহ! আমার সন্তানকে এই লোকের ন্যায় উপযুক্ত করো। দুধপান ছেড়ে দিয়ে শিশুটি লোকটির দিকে তাকাল, তারপর বলল, হে আল্লাহ আমাকে এই লোকের মতো করো না? এই বলে সে পুনরায় দুধ পান করতে থাকল। (বর্ণনাকারী বলেন), আমি যেন এখনও দেখছি, শিশুটির দুধ পানের চিত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তুলে ধরছেন এবং নিজের তর্জনী (শাহাদাৎ অঙ্গুলি) মুখে দিয়ে চুষছেন। তিনি (নবী) বললেন, একটি দাসীকে মারতে মারতে লোকেরা নিয়ে যাচ্ছিল আর বলছিল, তুমি ব্যভিচার করেছ এবং চুরি করেছ। মহিলাটি বলছিল, আমার জন্য আল্লাহ যথেষ্ট এবং আমার জন্য তিনিই উত্তম অভিভাবক। শিশুটির মা বলল, হে আল্লাহ! আমার সন্তানকে তুমি এই ব্যভিচারিণী মহিলার মতো করো না, দুধপান ছেড়ে দিয়ে শিশুটি মহিলাটির দিকে দৃষ্টিপাত করল, তারপর বলল, হে আল্লাহ! আমাকে তুমি এই মহিলার মতো করে গড়ে তুলো। মা ও শিশুর মাঝে এ সময় কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে গেলো। মা বলল, একজন সুঠাম ও সুন্দর লোক চলে যাবার সময় আমি বললাম, হে আল্লাহ! আমার ছেলেকে এমন উপযুক্ত করে দাও। তখন তুমি বললে, হে আল্লাহ! আমাকে এরকম করো না। আবার এই দাসীকে লোকেরা যখন মারধর করতে করতে নিয়ে যাচ্ছে এবং বলছে, তুমি ব্যভিচার করেছ এবং চুরি করেছ। আমি বললাম, হে আল্লাহ! আমার সন্তানকে এর মতো করো না। আর তুমি প্রতিউত্তরে বললে, হে আল্লাহ! আমাকে এমন করো। শিশুটি এবার উত্তর দিল, প্রথম লোকটি ছিল স্বৈরাচারী অত্যাচারী। আমি সেজন্যই বললাম, হে আল্লাহ! আমাকে এই লোকের মতো করো না। আর এই নারীকে তারা বলে, তুমি যিনা করেছ। সে প্রকৃতপক্ষে যিনা করেনি। তারা বলে, তুমি চুরি করেছ, প্রকৃতপক্ষে সে চুরি করেনি। এ কারণেই আমি বললাম, হে আল্লাহ! আমাকে এ মহিলাটির মতো করো।

(বুখারী হা/৩৪৩৬; মুসলিম হা/২৫৫০)

আয়াতুল কুরসী

আবূ হুরাইরা হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন: “একদা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আমাকে রমযানের যাকাতের হেফাযতে নিযুক্ত করেন। রাতে এক অজ্ঞাত ব্যক্তি আসে এবং হাত ভরে ভরে যাকাতের খাদ্য দ্রব্য চুরি করে। আমি তাকে গ্রেফতার করি এবং বলি: আল্লাহর কসম! তোমাকে রসুলুল্লাহর (সাঃ) নিকট পেশ করবো। সে বলে: আমি দরিদ্র আমার সন্তান-সন্ততি আছে। আমি খুব অভাবী। দুঃখ্ শুনে আমি তাকে ছেড়ে দেই। সকাল হলে নবী (সাঃ) আমাকে বলেন: আবু হুরাইরা! গত রাতে তোমার বন্দী কি করেছিল? আমি উত্তরে বলি: আল্লাহর রাসূল (সাঃ) সে আমার কাছে দুঃখ-দুস্থতার কথা বলে, ছেলে পেলের কথা বলে। আমার মায়া চলে আসে, আমি তাকে ছেড়ে দেই। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন সে মিথ্যা বলেছে এবং সে আবার আসবে। আমার বিশ্বাস হয়ে যায় সে অবশ্যই আসবে কারণ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) পুনরায় আসার কথা বললেন। আমি তাক লাগিয়ে থাকি। রাতে আবার হাত ভরে ভরে যাকাতের খাদ্য চুরি করে। আমি তাকে গ্রেফতার করে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) -র দরবারে পেশ করতে চাইলে, সে বলে: ছেড়ে দাও ভাই! আমি দুঃখি মানুষ, বাড়িতে আমার সন্তান-সন্ততি আছে, আমি আর আসব না। কথা শুনে তার প্রতি আমার রহম হ
য়। আমি ছেড়ে দেই। সকালে আল্লাহর রাসূল বলেন: আবূ হুরাইরাহ তোমার কয়দীর খবর কি? আমি উত্তরে বলি: আল্লাহর রাসূল সে তার দুঃখের কথা বলে, ছোট ছোট বাচ্চার কথা বলে, শুনে আমার রহম চলে আসে আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি। রাসূল (সাঃ) বলেন: সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে এবং সে আবার আসবে। আমি তৃতীয়বার তার অপেক্ষায় থাকি। আবার চুরি। পাকড়ও করে বলি, এবার অবশ্যই রাসূলুল্লাহর (সাঃ) নিকট পেশ করব। এটা শেষ তৃতীয়বার। তুমি বলো: আর আসবে না, আবার আস। সে বলে আমাকে ছেড়ে দাও। বিনিময়ে তোমাকে কিছু বাক্য শিক্ষা দেব। আল্লাহ তা দ্বারা তোমার উপকার করবে। আমি বলি সেগুলি কি? সে বলে: যখন তুমি বিছানায় শুতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসী পড়বে। (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যূল কাইয়্যূম) শেষ আয়াত পর্যন্ত। এ রকম করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বক্ষণের জন্য এক রক্ষক নির্ধারণ করা হবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার নিকটে আসবে না। এর পর আমি তাকে ছেড়ে দেই। সকালে আল্লাহ্‌র রাসূল আবার আমাকে জিজ্ঞাসা করেন: গত রাতে তোমার বন্দী কি করেছে? আমি বলি: সে আমাকে এমন কিছু কথা শিক্ষা দিতে চায় যার দ্বারা আল্লাহু আমার উপকার করবে। আমি তাকে ছেড়ে দেই। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন: সেই কথাগুলি কি? আমি বলি: সে আমাকে বলে: ঘুমানোর উদ্দেশ্যে যখন বিছানায় যাবে তখন আয়াতুল কুরসী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বে (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহ হুআল হাইয়্যূল কাইয়্যূম) সে বলে: এরকম করলে, তোমার হেফাযতের উদ্দেশ্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বক্ষণের জন্য এক রক্ষক নির্ধারণ করা হবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার নিকটবর্তি হবে না। -বর্ণনাকারী বলেন: সাহাবায়ে কিরাম কল্যাণের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী ছিলেন- সবকিছু শুনার পর নবী (সাঃ) বলেন: সে আসলে মিথ্যুক কিন্তু তোমাকে সত্য বলেছে। আবুহুরায়রা ! তুমি কি জান, তিন দিন ধরে তুমি কার সাথে কথোপকথন করছিলে? সে বলে: না। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন: ও ছিল শয়তান। [সহীহ বুখারী নং ২৩১১]

Wednesday, November 7, 2012

মুমিনদের শাফা‘আত

ক্বিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর বিচারের পরে যারা সৎকর্মশীল তারা জান্নাতে চলে যাবে। আর মুমিনরা অন্য মুমিনদের জন্য আল্লাহর কাছে সুফারিশ করবে। ফলে বহু মানুষ জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। এ সম্পর্কেই নিম্নোক্ত হাদীছটি।আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত,একদা কতিপয় লোক জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! ক্বিয়ামতের দিন কি আমরা আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাব? তিনি বললেন, হ্যাঁ। মেঘমুক্ত দ্বিপ্রহরের আকাশে সূর্য দেখতে কি তোমাদের কষ্ট হয় এবং মেঘমুক্ত আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে কি তোমাদের কোন অসুবিধা হয়? তারা বলল না, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এ সময় চন্দ্র-সূর্য দেখতে তোমাদের যে অসুবিধা হয় ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহকে দেখতে এর চেয়ে বেশী কোন অসুবিধা হবে না।

যখন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে, তখন একজন ঘোষক ঘোষণা দিবেন, প্রত্যেক উম্মত যে যার ইবাদত করত সে যেন তার অনুসরণ করে। তখন যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদত করত, তাদের একজনও বাকী থাকবে না। সকলেই জাহান্নামের মধ্যে গিয়ে পড়বে। শেষ পর্যন্ত এক আল্লাহর ইবাদতকারী নেককার ও গুনাহগার ছাড়া আর কেউ বাকী থাকবে না। তারপর আল্লাহ তাদের নিকট আসবেন এবং বলবেন, তোমরা কার অপেক্ষায় আছ? প্রত্যেক উম্মত, যে যার ইবাদত করত, সে তার অনুসরণ কর। তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তো সে সব লোকদেরকে দুনিয়াতেই বর্জন করেছিলাম, যখন আজকের অপেক্ষায় তাদের কাছে আমাদের বেশী প্রয়োজন ছিল। আমরা কখনও তাদের সঙ্গে চলিনি। আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর বর্ণনায় আছে, তখন তারা বলবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের রব আমাদের নিকট না আসেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এ স্থানে অপেক্ষা করব। যখন আমাদের প্রতিপালক আসবেন, তখন আমরা তাকে চিনতে পারব।

আর আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ)-এর বর্ণনায় আছে, আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন, তোমাদের এবং তোমাদের প্রতিপালকের মধ্যে এমন কোন চিহ্ন আছে কি যাতে তোমরা তাঁকে চিনতে পারবে? তারা বলবে, হ্যাঁ। তখন আল্লাহর পায়ের নলা প্রকাশ করা হবে এবং বিশেষ আলো প্রকাশিত হবে। তখন যে ব্যক্তি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহকে সিজদা করত, শুধু তাকেই আল্লাহ সিজদার অনুমতি দিবেন। আর যারা কারো ভয়ে কিংবা মানুষকে দেখানোর জন্য সিজদা করত, তারা থেকে যাবে। তারা পিঠের পিছনের দিকে চিৎ হয়ে উল্টে পড়ে যাবে।

তারপর জাহান্নামের উপর দিয়ে পুলছিরাত পাতানো হবে এবং শাফা‘আতের অনুমতি দেওয়া হবে। তখন নবী রাসূলগণ স্ব স্ব উম্মতের জন্য এ প্রার্থনা করবেন, হে আল্লাহ! নিরাপদে রাখ, নিরাপদে রাখ। অনেক মুমিন এ পুলছিরাতের উপর দিয়ে চোখের পলকে পার হয়ে যাবে। অনেকেই বিদ্যুতের গতিতে পার হবে। অনেকেই বাতাসের গতিতে পার হবে। অনেকেই ঘোড়ার গতিতে পার হবে। আবার অনেকেই উটের গতিতে পার হবে। কেউ ছহীহ-সালামতে বেঁচে যাবে। আবার কেউ এমনভাবে পার হয়ে আসবে যে তার দেহ ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাবে। আবার কেউ খন্ড-বিখন্ড হয়ে জাহান্নামে পড়বে। অবশেষে মুমিনগণ জাহান্নাম হ’তে নিষ্কৃতি লাভ করবে। তারপর নবী করীম (ছাঃ) কসম করে বললেন,

তোমাদের যে কেউ নিজের হক বা অধিকারের দাবীতে কত কঠোর তা তো তোমাদের কাছে স্পষ্ট। কিন্তু মুমিনগণ তাদের সে সমস্ত ভাইদের মুক্তির জন্য আল্লাহর সাথে আরও অধিক ঝগড়া করবে, যারা তখনও জাহান্নামে পড়ে রয়েছে। তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! এ সমস্ত লোকেরা আমাদের সাথে ছিয়াম পালন করত, ছালাত আদায় করত এবং হজ্জ পালন করত। সুতরাং তুমি তাদেরকে জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ দাও।

তখন আল্লাহ বলবেন, যাও তোমরা যাদেরকে চিন তাদেরকে জাহান্নাম হ’তে মুক্ত করে আন। তাদের মুখের আকৃতি জাহান্নামের আগুনের প্রতি হারাম করা হয়েছে। এজন্য তারা মুখ দেখে চিনতে পারবে। তখন তারা জাহান্নাম হ’তে অনেক লোক বের করে আনবে।

তারপর বলবেন, হে আমাদের প্রতিপালক! এখন সেখানে আর এমন একজন লোকও নেই যাকে বের করার জন্য আপনি আদেশ করেছেন।

তখন আল্লাহ বলবেন, আবার যাও যাদের অন্তরে এক দীনার পরিমাণ ঈমান আছে তাদেরকে বের করে আন। এতেও তারা বহু সংখ্যক লোককে বের করে আনবে। তারপর আল্লাহ বলবেন, পুনরায় যাও যাদের অন্তরে অর্ধ দীনার পরিমাণ ঈমান আছে তাদেরকে বের করে আন। সুতরাং তাতেও তারা বহু সংখ্যক লোককে জাহান্নাম থেকে বের করে আনবে।

তারপর আল্লাহ বলবেন, আবার যাও যাদের অন্তরে এক বিন্দু পরিমাণ ঈমান আছে, তাদেরকে বের করে আন। এবারও তারা বহুসংখ্যক লোককে জাহান্নাম থেকে বের করে আনবে এবং বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! ঈমানদার কোন ব্যক্তিকে আমরা জাহান্নামে রেখে আসিনি।

তখন আল্লাহ বলবেন, ফেরেশতাগণ, নবীগণ এবং মুমিনগণ সকলেই শাফা‘আত করেছেন। এখন আমি পরম দয়ালু ব্যতীত আর কেউ বাকী নেই। এ বলে তিনি মুষ্টি ভরে এমন একদল লোককে জাহান্নাম থেকে বের করবেন যারা কখনও কোন নেক কাজ করেনি, যারা জ্বলে-পুড়ে কালো কয়লা হয়ে গেছে। অতঃপর তাদেরকে জান্নাতের সামনে একটি নহরে ঢেলে দেওয়া হবে, যার নাম হ’ল ‘নহরে হায়াত’।

এতে তারা স্রোতের ধারে যেমনভাবে গাছের বীজ গজায়, তেমনিভাবে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সজীব হয়ে উঠবে। তখন তারা সেখান থেকে বের হয়ে আসবে মুক্তার মত চকচকে হয়ে। তাদের কাঁধে সীল মোহর থাকবে। জান্নাতীরা তাদের দেখে বলবে এরা পরম দয়ালু আল্লাহর মুক্তকৃত দাস। আল্লাহ্ তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন, অথচ তারা পূর্বে কোন আমল বা কোন কল্যাণের কাজ করেনি। অতঃপর তাদেরকে বলা হবে, এ জান্নাতে তোমরা যা দেখছ, তা তোমাদেরকে দেওয়া হ’ল এর সঙ্গে অনুরূপ পরিমাণ আরও দেওয়া হ’ল’

দুনিয়াতে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত করলে কিংবা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করলে পরকালে ঐ উপাস্য-মা‘বূদ ও শরীকদের সাথেই জাহান্নামে যেতে হবে। পক্ষান্তরে যারা কেবল আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখত, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করতো না; তারা কোন নেকীর কাজ না করলেও এক সময় জান্নাতে যাবে তাদের ঈমানের কারণে। তাই আল্লাহর প্রতি খালেছ অন্তরে ঈমান আনতে হবে। তাহ’লে জান্নাত লাভ করা যাবে। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর প্রতি একনিষ্ঠভাবে ঈমান আনার তাওফীক্ব দিন- আমীন!

(Courtesy: QuranerAlo.com)

Wednesday, October 24, 2012

কুরবানীতে শরীক হওয়া

• আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রা.) বলেন, ‘আমরা রাসূল (সা.)-এর সাথে এক সফরে ছিলাম। এমতাবস্থায় কুরবানীর ঈদ উপস্থিত হলো। তখন আমরা সাতজনে একটি গরু ও দশজনে একটি উটে শরীক হলাম।
(তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত, হা/১৪৬৯; সনদ সহীহ)।

• জাবির (রা.) বলেন, ‘আমরা আল্লাহর রাসূল (সা.) এর সাথে হজ্জ ও উমরার সফরে সাথী ছিলাম।..... তখন আমরা একটি গরু ও উটে সাতজন করে শরীক হয়েছিলাম।
(সহীহ মুসলিম, হা/১৩১৮) সফরে সাত বা দশজন মিলে একটি পরিবারের ন্যায়, যাতে গরু ও উটের মতো বড় পশু যবেহ ও কুটাবাছা এবং গোশত বণ্টন সহজ হয়। জমহুর বিদ্বানগণের মতে হজ্জের হাদীর ন্যায় কুরবানীতেও শরীক হওয়া চলবে। (মর‘আত, ২/৩৫৫, ৫/৮৪)।

• আনাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) হজ্জের সফরে মিনায় নিজ হাতে ৭টি উট (অন্য বর্ণনায় এরও অধিক) দাড়ানো অবস্থায় ‘নহর’ করেছেন এবং মদীনায় (মুক্বীম অবস্থায়) দু‘টি সুন্দর শিংওয়ালা খাসি কুরবানী করেছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, বিদায় হজ্জের সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) তার সফরসঙ্গী স্ত্রী ও পরিবারের পক্ষ হতে একটি গরু কুরবানী করেন।
(বুখারী, ১/২৩১; সহীহ আবু দাউদ, হা/১৫৩৯) অবশ্য মক্কায় (মিনায়) নহরকৃত উটগুলো সাহাবীগণের পক্ষ থেকেও হতে পারে।

আলোচনা:

ইবনু আববাস (রা.) এর হাদীসটি নাসাঈ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহতে, জাবির (রা.) বর্ণিত হাদীসটি সহীহ মুসলিম ও আবুদাউদে এবং আনাস (রা.) বর্ণিত হাদীসটি সহীহ বুখারীতে সংকলিত হয়েছে। সহীহ মুসলিম ও সহীহ বুখারীতে যথাক্রমে ‘হজ্জ’ও ‘মানসিক’ অধ্যায়ে এবং সুনানে ‘কুরবানী’ অধ্যায়ে হাদীসগুলো এসেছে।
যেমন-(১) তিরমিযী ‘কুরবানীতে শরীক হওয়া’ অধ্যায়ে ইবনু আববাস, জাবির ও আলী (রা.) থেকে মোট তিনটি হাদী এনেছেন।
(২) ইবনু মাজাহ উক্ত মর্মের শিরোনামে ইবনু আববাস,জাবির, আবূ হুরায়রা ও আয়েশা (রা.) হতে যে পাঁচটি হাদীস (৩১৩১-৩৪ নং) এনেছেন, তার সবগুলোই সফরে কুরবানী সংক্রান্ত।
(৩) নাসাঈ কেবলমাত্র ইবনু আববাস ও জাবির (রা.) থেকে পূর্বের দু‘টি হাদীস (২৩৯৭-৯৮ নং) এনেছেন।
(৪) আবু দাউদ শুধুমাত্র জাবির (রা.) এর পূর্ববর্ণিত সফরে কুরবানীর হাদীসটি এনেছেন। তিনটি সহীহ সনদে (২৮০৭-৯ নং), যার মধ্যে ২৮০৮ নং হাদীরটিতে কোন ব্যাখ্যা নেই।

বিভ্রাটের কারণ:
মিশকাত শরীফে ইবনু আববাস (রা.) এর সফরের হাদীসটি (১৪৬৯ নং) এবং জাবির (রা.) বর্ণিত ব্যাখ্যাশুন্য হাদীসটি (১৪৫৮ নং ) সংকলিত হয়েছে। সম্ভবত জাবির (রা.) বর্ণিত ‘মুত্বলাক্ব’ বা ব্যাখ্যাশুন্য হাদীসটিকে ভিত্তি করেই মুক্বীম অবস্থায় গরু বা মহিষে সাতভাগা কুরবানীর নিয়ম চালু হয়েছে। অথচ, ভাগের বিষয়টি সফরের সঙ্গে সম্পৃক্ত, যা ইবনু আববাস ও জাবির (রা.) বর্ণিত বিস্তারিত হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে।
(মিশকাত, হা/১৪৬৯; মুসলিম , হা/১৩১৮; বুখারী, ১/২৩১)

আর একই রাবীর বর্ণিত সংক্ষিপ্ত হাদীসের স্থলে বিস্তারিত ও ব্যাখ্যা সম্বলিত হাদীস দলীলের ক্ষেত্রে গ্রহণ করাই মুহাদ্দিসগণের সর্ববাদীসম্মত রীতি।

তাছাড়া, মুক্বীম অবস্থায় মদীনায় রাসূল (সা.) বা সাহাবায়ে কেরাম কখনো ভাগে কুরবানী করেছেন বলেও জানা যায় না। ইমাম মালিক (রাহ.) কুরবানীতে শরীক হওয়ার বিষয়টিকে মাকরূহ মনে করতেন।
(মুওয়াত্বা মালেক, পৃ. ২৯৯)।

উভয় পক্ষের প্রদানকৃত দলীল সমূহের পর্যালোচনা:
মুক্বীম অবস্থায় সাতটি পরিবারের সকল সদস্যের পক্ষ থেতে সাতটি ভাগ দিয়ে একটি উট বা গরু বা মহিষ ক্রয় করে করে কুরবানী করার ব্যাপারে উপরে উল্লেখিত উভয় পক্ষের উপস্থাপিত প্রমাণিত প্রমাণাদিকে বিশ্লেষণমূলক পর্যলোচনা করলে যে বিষয়টি আমাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে, জাবির (রা.) বর্ণিত আবু দাউদদের ব্যাখ্যা শূন্য হাদীসটির কারণেই মুসাফির ও মুক্বীম অবস্থায় কুরবানীতে ভাগাভাগি নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রথমত:
এ হাদীসটিতে কেবল বলা হচ্ছে, ‘গরুতে সাতজন আর উটে সাতজন’। এখানে সফর না মুক্বীম তা বলা হয়নি। কিন্তু এটি যে সফরের হাদীস তা জাবির (রা.) বর্ণিত অন্যান্য হাদীসগুলো দ্বারা প্রমাণিত।
দ্বিতীয়ত: জাবির (রা.) বর্ণিত সফরের হাদীসগুলো ইমাম আবূ দাউদ যে অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন এ ব্যাখ্যাশূন্য হাদীসটিও সে অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন।
সর্বোপরি, উভয় পক্ষের মতের স্বপক্ষে উপস্থাপিত দলীলাদি পর্যালোচনা করলে আমাদের সামনে তিনটি বিষয় সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, তা হলে:
1. সফর ও মুক্বীম অবস্থায় একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি পশু কুরবানী করার ব্যাপারে উভয় পক্ষই একমত।
2. ভাগে কুরবানী জায়েয।
3. সফর ও মুক্বীম অবস্থায় সাত ব্যক্তির পক্ষ থেকে ভাগে একটি পশু কুরবানী করা যায়।

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কিছু কথা না বললেই নয়, তা হলো- হাদীসে বলা হয়েছে, ‘‘সাতজনের পক্ষ থেকে’ (মুসলিম, মিশকাত, হা/১৪৫৮), কিন্তু আমাদের সমাজে কুরবানী করা হচ্ছে সাত পরিবারের পক্ষ থেকে।
বলা যায়, সফর অবস্থাতেও সাত পরিবারের পক্ষ থেকে অনুমতি নেই।

আরো স্পষ্ট হলো, সাত জনের প্রেক্ষাপট কেবল সফর অবস্থায় সৃষ্টি হয়। মুক্বীম অবস্থায় কুরবানী পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত, যেমন- রাসূল (সা.) করতেন। মূলত, এক্ষেত্রে সফরের হাদীসগুলোকে আম হিসেবে ধরা যাচ্ছে না। কারণ, এ হাদীসগুলো রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তার সাহাবীগণ (রা.) মুক্বীম অবস্থায় যে ভাগা কুরবানী করতেন, সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোন হাদীস নেই। রাসূল (সা.) প্রতি বছর দু‘টি করে খাসি কুরবানী করতেন।

(মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত, হা/১৪৫৩)

অথচ, দুঃখের বিষয় বর্তমানে কেবল সাত ব্যক্তির পক্ষ থেকে নয়; বরং মুক্বীম অবস্থায় সাত পরিবারের বর্তমানে কেবল সাত ব্যক্তির পক্ষ থেকে নয়; বরং মুক্বীম অবস্থায় সাত পরিবারের ৭-এর অধিক ব্যক্তির পক্ষ থেকে একটি গরু কুরবানী দেওয়া হচ্ছে।

আজকাল পরিবারের পক্ষ থেকে একটি ছাগল কুরবানীর সাথে একটি গরুর ভাগা নেওয়া হচ্ছে মূলত গোশত বেশী পাবার স্বার্থে। ‘নিয়ত’ যখন গোশত খাওয়া, তখন কুরবানীর উদ্দেশ্য কিভাবে হাছিল হবে? কুরবানী হলো পিতা ইবরাহীমের সুন্নাত, যা তিনি পুত্র ইসমাঈলের জীবনের বিনিময়ে করেছিলেন।
আর তা ছিল আল্লাহর পক্ষ হতে পাঠানো একটি পশুর জীবন অর্থাৎ দুম্বা। অতএব ইবরাহীম ও মুহাম্মাদী সুন্নাতের অনুসরণে নিজের ও নিজ পরিবারের পক্ষ হতে আল্লাহর রাহে একটি জীবন তথা একটি পূর্ণাঙ্গ পশু কুরবানী দেওয়া উচিত, পশুর দেহের কোন খন্ডিত অংশ নয়।

পরিশেষে, মনে রাখতে হবে কুরবানী হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত ও আল্লাহ রাববুল ‘আলামিনের নৈকট্য লাভের উপায়। তাই তা আদায় করতে হবে সময়, সংখ্যা ও পদ্ধতিগত দিক দিয়ে শরীয়ত অনুমোদিত নিয়মাবলি অনুসরণ বা শুধু সদকা (দান) নয়।। কুরবানীর উদ্দেশ্য শুধু গোশত খাওয়া নয়, শুধু মানুষের উপকার করা নয় বা শুধু সদকা (দান) নয়। কুরবানীর উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ রাববুল ‘আলামীনের একটি মহান নিদর্শন তার রাসূলের নির্দেশিত পদ্ধতিতে আদায় করা।

---কুরবানীর ইতিহাস, উদ্দেশ্য ও কতিপয় বিধান

লেখক- ড. মোঃ আবদুল কাদের

Monday, October 1, 2012

জুম’আর আদব


লেখকঃ অধ্যাপক মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম

। জুম’আর দিন গোসল করা। যাদের উপর জুম’আ ফরজ তাদের জন্য এ দিনে গোসল করাকে রাসুল (সাঃ) ওয়াজিব করেছেন(বুখারীঃ ৮৭৭, ৮৭৮, ৮৮০, ৮৯৭, ৮৯৮)। পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসাবে সেদিন নখ ও চুল কাটা একটি ভাল কাজ।
। জুম’আর সালাতের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা। (বুখারীঃ ৮৮০)
। মিস্ওয়াক করা। (ইবনে মাজাহঃ ১০৯৮, বুখারীঃ৮৮৭, ইঃফাঃ৮৪৩)
। গায়ে তেল ব্যবহার করা। (বুখারীঃ৮৮৩)
। উত্তম পোশাক পরিধান করে জুম’আ আদায় করা। (ইবনে মাজাহঃ১০৯৭)
। মুসুল্লীদের ইমামের দিকে মুখ করে বসা। (তিরমিযীঃ৫০৯, ইবনে মাজাহঃ১১৩৬)
। মনোযোগ সহ খুৎবা শোনা ও চুপ থাকা- এটা ওয়াজিব। (বুখারীঃ ৯৩৪, মুসলিমঃ৮৫৭, আবু দাউদঃ১১১৩, আহমাদঃ১/২৩০)
। আগে ভাগে মসজিদে যাওয়া। (বুখারীঃ৮৮১, মুসলিমঃ৮৫০)
। পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন। (আবু দাউদঃ ৩৪৫)
১০। জুম’আর দিন ফজরের নামাজে ১ম রাক’আতে সূরা সাজদা (সূরা নং-৩২) আর ২য় রাকা’আতে সূরা ইনসান(দাহর)(সূরা নং-৭৬) পড়া। (বুখারীঃ৮৯১, মুসলিমঃ৮৭৯)
১১। সূরা জুম’আ ও সূরা মুনাফিকুন দিয়ে জুম’আর সালাত আদায় করা। অথবা সূরা আলা ও সূরা গাশিয়া দিয়ে জুম’আ আদায় করা। (মুসলিমঃ৮৭৭, ৮৭৮)
১২। জুম’আর দিন ও জুম’আর রাতে বেশী বেশী দুরুদ পাঠ। (আবু দাউদঃ ১০৪৭)
১৩। এ দিন বেশী বেশী দোয়া করা।। (বুখারীঃ ৯৩৫)
১৪। মুসুল্লীদের ফাঁক করে মসজিদে সামনের দিকে এগিয়ে না যাওয়া। (বুখারীঃ৯১০, ৮৮৩)
১৫। মুসুল্লীদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে আগানোর চেষ্টা না করা। (আবু দাউদঃ ৩৪৩, ৩৪৭)
১৬। কাউকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসার চেষ্টা না করা। (বুখারীঃ৯১১, মুসলিমঃ২১৭৭, ২১৭৮)
১৭। খুৎবা চলাকালীন সময়ে মসজিদে প্রবেশ করলে তখনও দু’রাকা’আত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ সালাত আদায় করা ছাড়া না বসা। (বুখারীঃ ৯৩০)
১৮। জুম’আর দিন জুম’আর পূর্বে মসজিদে জিকর বা কোন শিক্ষামুলক হালকা না করা। অর্থাৎ ভাগ ভাগ হয়ে, গোল গোল হয়ে না বসা, যদিও এটা কোন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান হোক না কেন। (আবু দাউদঃ ১০৮৯)
১৯। কেউ কথা বললে ‘চুপ করুন’ এটুকুও না বলা। (নাসায়ীঃ ৭১৪, বুখারীঃ ৯৩৪)
২০। মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেয়াজ, রসুন না খাওয়া ও ধুমপান না করা। (বুখারীঃ ৮৫৩)
২১। ঘুমের ভাব বা তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে বসার জায়গা বদল করে বসা। (আবু দাউদঃ ১১১৯)
২২। ইমামের খুৎবা দেওয়া অবস্থায় দুই হাঁটু উঠিয়ে না বসা। (আবু দাউদঃ ১১১০, ইবনে মাজাহঃ ১১৩৪)
২৩। খুৎবার সময় ইমামের কাছাকাছি বসা। জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত হলেও ইমাম থেকে দূরে উপবেশনকারীরা বিলম্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদঃ ১১০৮)
২৪। জুম’আর দিন সূরা কাহফ পড়া। এতে পাঠকের জন্য আল্লাহ তায়ালা দুই জুম’আর মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেন। (হাকেমঃ ২/৩৬৮, বায়হাকীঃ ৩/২৪৯)
২৫। জুম’আর আযান দেওয়া। অর্থাৎ ইমাম মিম্বরে বসার পর যে আযান দেওয়া হয় তা।(বুখারীঃ ৯১২)
২৬।জুম’আর ফরজ নামাজ আদায়ের পর মসজিদে ৪ রাকা’আত সুন্নাত সালাত আদায় করা। (বুখারীঃ ১৮২, মুসলিমঃ ৮৮১, আবু দাউদঃ ১১৩০)
২৭। উযর ছাড়া একই গ্রাম ও মহল্লায় একাধিক জুম’আ চালু না করা। আর উযর হল এলাকাটি খুব বড় হওয়া, বা প্রচুর জনবসতি থাকা, বা মসজিদ দূরে হওয়া, বা মসজিদে জায়গা না পাওয়া, বা কোন ফিতনা ফাসাদের ভয় থাকা। (মুগনি লিবনি কুদামাঃ ৩/২১২, ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহঃ ২৪/২০৮)
২৮। ওজু ভেঙ্গে গেলে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া। অতঃপর আবার ওজু করে মসজিদে প্রবেশ করা। (আবু দাউদঃ ১১১৪)
২৯। একান্ত উযর না থাকলে দুই পিলারে মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় সালাত আদায় না করা। (হাকেমঃ ১/১২৮)
৩০। সালাতের জন্য কোন একটা জায়গাকে নির্দিষ্ট করে না রাখা, যেখানে যখন জায়গা পাওয়া যায় সেখানেই সালাত আদায় করা (আবু দাউদঃ৮৬২)। অর্থাৎ আগে থেকেই নামাজের বিছানা বিছিয়ে জায়গা দখল করে না রাখা বরং যে আগে আসবে সেই আগে বসবে।
৩১। কোন নামাজীর সামনে দিয়ে না হাঁটা অর্থাৎ মুসুল্লী ও সুতরার মধ্যবর্তী জায়গা দিয়ে না হাঁটা। (বুখারীঃ৫১০)
৩২। এতটুকু জোরে আওয়াজ করে কোন কিছু না পড়া, যাতে অন্যের সালাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে। (আবু দাউদঃ ১৩৩২)
৩৩। পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার ফযীলত অন্তরে জাগরূক রাখা।
৩৪। হাঁটার আদব মেনে মসজিদে গমন করা।
৩৫। খুৎবার সময় খতীবের কোন কথার সাড়া দেওয়া বা তার প্রশ্নের জবাব দানে শরীক হওয়া জায়েজ। (বুখারীঃ ১০২৯, মুসলিমঃ ৮৯৭)
৩৬। হানাফী আলেমগন বলেছেন যে, ভিড় প্রচণ্ড হলে সামনের মুসুল্লীর পিঠের উপর সিজদা দেওয়া জায়েজ (আহমাদঃ১/৩২)। দরকার হলে পায়ের উপর ও দিতে পারে (আর রাউদুল মুরবী)
৩৭। যেখানে জুম’আর ফরজ আদায় করেছে, উত্তম হল ঐ একই স্থানে সুন্নাত না পড়া। অথবা কোন কথা না বলে এখান থেকে গিয়ে পরবর্তী সুন্নাত সালাত আদায় করা। (মুসলিমঃ ৭১০, বুখারীঃ ৮৪৮)
৩৮। ইমাম সাহেব মিম্বরে এসে হাজির হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাসবীহ-তাহলীল, তাওবা- ইস্তিগফার ও কুরআন তিলাওয়াতে রত থাকা।

সূত্রঃ বই-প্রশ্নোত্তরে জুমু’আ ও খুৎবা
পরিমার্জনেঃ ডঃ মোহাম্মদ মনজুরে ইলাহী, 
ডঃ আবু বকর মুহাম্মদ জাকারিয়া মজুমদার,
ডঃ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।

Saturday, September 8, 2012

আল্লাহর জন্য ভালোবাসার ফল

* আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন বলবেন, যারা পরস্পরকে ভালোবেসেছে আমারই জন্য তারা আজ কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার ছায়ায় ছায়া দান করবো। আজ এমন দিন আমার ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া নেই। (বর্ণনায় : মুসলিম ১৯৮৮)

ক্ষমা

* আবু হুরায়রা রাঃ বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেন: যে ব্যক্তি দৈনিক একশত বার سبحان الله وبحمده সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি (আল্লাহ পূত ও পবিত্র এবং তাঁরই জন্য সকল প্রশংসা) পাঠ করে তার পাপসমূহ মুছে ফেলা হয়, যদিও তা সাগরের ফেনারাশির সমান হয়ে থাকে। [বুখারী খন্ড ৭৫ হাদিস ৪১৪]

দোয়া

* আল্লাহ তা'য়ালা বলেন -
"বল তো কে নিঃসহায়ের ডাকে সাড়া দেন যখন সে ডাকে এবং কষ্ট দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকে পৃথিবীতে পুর্ববর্তীদের স্থলাভিষিক্ত করেন। সুতরাং আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? তোমরা অতি সামান্যই ধ্যান কর।" [ সূরা নমল -৬২]


* " হে আমার পালনকর্তা, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।"  [সূরা ত্বোয়া-হা -১১৪]
 
* "যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট।" [সূরা আত্ব-ত্বালাক্ব -০৩] 

* "হে আমাদের পালনকর্তা, আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুন, যেদিন হিসাব কায়েম হবে।"
[সূরা ইব্রাহীম -৪১]


* "হে আমার পালনকর্তা, ক্ষমা করুন ও রহম করুন। রহমকারীদের মধ্যে আপনি শ্রেষ্ঠ রহমকারী।"
[সূরা আল মু’মিনূন -১১৮]


* যে গোনাহ, করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পায়। [সূরা আন নিসা-১১০]

* "হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের নূরকে পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি সবকিছুর উপর সর্ব শক্তিমান।"   [ সূরা আত-তাহরীম -০৮]

* "হে আমার পালনকর্তা, আমাকে প্রজ্ঞা দান কর এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত কর এবং আমাকে পরবর্তীদের মধ্যে সত্যভাষী কর। এবং আমাকে নেয়ামত উদ্যানের অধিকারীদের অন্তর্ভূক্ত কর।" [সূরা আশ-শো’আরা -৮৩-৮৫]
  
* "হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমাকে সামর্থ দাও যাতে আমি তোমার সেই নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, যা তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে দান করেছ এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকর্ম করতে পারি এবং আমাকে নিজ অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মপরায়ন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর।" [সূরা নমল -১৯]
  
* 'হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি বিপদের কষ্ট, নিয়তির অমঙ্গল, দুর্ভাগ্যের স্পর্শ ও বিপদে শক্রর উপহাস হতে।।'
[বোখারি : ৫৮৭১]

* ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার অন্যতম কার্যকর উপায় হল প্রিয় নবী (সা) এর নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করা। রাসূল (সা) ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা থেকে এই দোয়াটির মাধ্যমে আল্লাহ্‌ তা’আলার কাছে সাহায্য চাইতেন ,
“আল্লাহুম্মা আস্‌লিহ্‌লী দ্
বীনী আল্লাজি হুয়া ‘ইস্‌মাতু আমরি, ওয়া আস্‌লিহ্‌লী দুনিয়াআ আল্লাতি ফীহা মা’আশি, ওয়া আস্‌লিহ্‌লী আখিরাতি আল্লাতি ইলাইহা মা’আদি, ওয়াজ’আল আল হায়াতা জিয়াদাতাল্লি ফী কুল্লি খাইর, ওয়াল মাউতা রাহাতাল্লি মিন কুল্লী শার্‌রি।”
অর্থঃ হে আল্লাহ্‌! তুমি আমার দ্বীনকে সংশোধন করে দাও যা আমার জীবনের ভিত্তি এবং আমার পার্থিব কাজকর্মকেও সংশোধন করে দাও যার মধ্যে রয়েছে আমার জীবিকা এবং আমাকে দাও সর্বোত্তম সমৃদ্ধি আখিরাতে যেখানে আমার প্রত্যাবর্তন। আমার জীবনকে পুণ্য অর্জনের মাধ্যম বানিয়ে দাও এবং আমার মৃত্যুকে কর সমস্ত মন্দ থেকে বেঁচে যাওয়ার অবকাশ। [সহীহ্‌ মুসলিম; হাদিস নং-২৭২০]

* 'হে আল্লাহ ! আমি যে সব গুনাহ অতীতে করেছি এবং যা পরে করেছি উহার সমস্তই তুমি মাফ করে দাও , মাফ করো সেই গুনাহগুলিও যা আমি গোপনে করেছি আর যা প্রকাশ্যে করেছি, মাফ করো আমার সীমালঙ্ঘন জনিত গুনাহসমূহ এবং সেই সব গুনাহ যে গুনাহ সম্বন্ধে তুমি আমা অপেক্ষা অধিক জ্ঞাত, তুমি যা চাও আগে করো এবং তুমি যা চাও পিছে করো । আর তুমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোন মাবুদ নেই ।' [মুসলিম-১/৫৩৪] 

* "হে আল্লাহ, আমি একজন মানুষ মাত্র।  তাই মুসলিমদের যাকেই আমি গালি দিয়েছি বা অভিশাপ করেছি বা চাবুক মেরেছি তার জন্যে তা পবিত্রতা ও রহমত বানিয়ে দাও"  (মুসলিম ২৬০১)

* আমরা এবং সমগ্র জগত আল্লাহর জন্য সকালে উপনীত হয়েছি , আর সমুদয় প্রসংশা আল্লাহর জন্য , আল্লাহ ছাড়া কোনও মাবুদ নেই, তিনি এক তাঁর কোনও শরীক নেই , রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা মাত্র তাঁর । তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান । প্রভু হে ! এই দিনের মাঝে এবং উহার পরে যা কিছু মঙ্গল নিহিত আছে আমি তোমার নিকট উহার প্রার্থনা করছি। আর ওই দিনের মাঝে এবং উহার পরে যা কিছু অমঙ্গল আছে উহা হইতে তোমার নিকট আশ্রয় চাই । প্রভু ! আলস্য এবং বার্ধক্যের কষ্ট হতে আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি , প্রভু দোযখের আজাব হতে এবং কবরের আজাব হতে তোমার আশ্রয় কামনা করি ।[ মুসলিম -৪/২০৮৮]
 

Wednesday, September 5, 2012

হাদীসের রত্ন ভান্ডার থেকে একগুচ্ছে মনি-মুক্তা

১. اتَّقِ اللَّه حَيْثُمَا كُنْتَ وَأَتْبِعْ السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهَا وخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ
“আল্লাহকে ভয় কর যেখানেই থাকনা কেন। অন্যায় কাজ হয়ে গেলে পরক্ষণেই ভাল কাজ কর। তবে ভাল কাজ অন্যায়কে মুছে দিবে আর মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার কর।“ (তিরমিযী-সহীহ)
২. ((إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ))
“সব কাজই নিয়তের উপর নির্ভরশীল।“(সহীহ বুখারী)
৩. ((الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ))
“প্রকৃত মুসলিম সে ব্যক্তি যার মুখের ভাষা এবং হাত থেকে অন্য মুসলমানগণ নিরাপদ থাকে।“ (সহীহ বুখারী)
৪. (( مَنْ غَشّنا فَلَيْسَ مِنِّا ))
যে আমাদের সাথে প্রতারণা করে সে আমাদের দলভূক্ত নয়। (মুসলিম)
৫. ((مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يُؤْذِ جَارَهُ))
“যে আল্লাহ এবং আখেরাতের উপর বিশ্বাস রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।“ (বুখারী)
৬ (( مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ ))
“যে আল্লাহ এবং আখেরাতের উপর বিশ্বাস রাখে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে।“ (বুখারী)
৭.مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ
“যে আল্লাহ এবং আখেরাতের উপর বিশ্বাস রাখে সে যেন ভাল কথা বলে নতুবা চুপ থাকে।“ (বুখারী)
৮.(( مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيهِ))
“একজন মানুষের একটি সুন্দর ইসলামী বৈশিষ্ট হল সে অযথা কাজ পরিত্যাগ করে।“ (মুওয়াত্তা মালেক)
৯. مَنْ كَانَ فِي حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ اللَّهُ فِي حَاجَتِهِ
“যে তার কোন ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করবে আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করবেন।“ (বুখারী)
১০. ((مَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ))
“যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের একটি কষ্ট দূর করবে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাকে অনেক বিপদের মধ্য থেকে একটি বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন।“ (বুখারী)
.
১১. ((مَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ))
“যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবেন।“ (বুখারী)
১২. ((عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ فَإِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِي إِلَى الْبِرِّ وَالْبِرَّ يَهْدِي إِلَى الْجَنَّةِ))
“সব সময় সত্যকে আঁকড়ে ধরে থাক। কারণ সত্য কথা ভাল কাজের পথ দেখায়। আর ভাল কাজ জান্নাতের পথ দেখায়।“ (মুসলিম).
১৩. إِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الْفُجُورِ وَالْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ
“মিথ্যা থেকে দূরে থাক। কারণ মিথ্যা অন্যায় কাজের পথ দেখায় আর অন্যায় কাজ জাহান্নামের পথ দেখায়।“ (মুসলিম)
১৪. الدَّالُّ عَلَى الْخَيْرِ كَفَاعِلِهِ
“যে ব্যক্তি ভাল কাজের রাস্তা দেখায় সে ঐ ব্যক্তির মতই সাওয়াব পায় যে উক্ত ভাল কাজ সম্পাদন করে।” (তিরমিযী-সহীহ)
১৫. اتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ فَإِنَّهَا لَيْسَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللَّهِ حِجَابٌ
“মজলুমের বদ দুআকে ভয় কর। কারণ, তার বদ দুআ আর আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা নেই।“ (বুখারী)
১৬. اتَّقُوا الظُّلْمَ فَإِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
“তোমরা জুলুম থেকে দূরে থাক। কারণ জুলুম কিয়ামতের দিন ঘোর অন্ধকার হিসেবে উপস্থিত হবে।“ (মুসলিম)
১৭. لَيْسَ الشَّدِيدُ بِالصُّرَعَةِ إِنَّمَا الشَّدِيدُ الَّذِي يَمْلِكُ نَفْسَهُ عِنْدَ الْغَضَبِ
“কুস্তি লড়াইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত বীরত্বের পরিচয় পাওয়া যায় না। বরং প্রকৃত বীর তো সেই ব্যক্তি যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।“ (বুখারী)
১৮. لَا يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلَاثِ لَيَالٍ
“এক মুসলমানের জন্য অপর মুসলমান ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন করে রাখা বৈধ নয়।“ (বুখারী)
১৯. مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ
“দান করলে সম্পদ কমে না।“ (মুসলিম)
২০. ((مَا زَادَ اللَّهُ عَبْدًا بِعَفْوٍ إِلَّا عِزًّا))
“ক্ষমা করলে আল্লাহ বান্দার সম্মান বাড়িয়ে দেন।“ (মুসলিম)
২১. ((مَا تَوَاضَعَ أَحَدٌ لِلَّهِ إِلَّا رَفَعَهُ اللَّهُ))
“আল্লাহর উদ্দেশ্যে কেউ বিনয়ী হলে আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।“ (মুসলিম)
২২. ((لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيرَنَا وَيُوَقِّرْ كَبِيرَنَا))
“যে ছোটদেরকে দয়া এবং বড়দেরকে শ্রদ্ধা করেনা সে আমাদের দলভূক্ত নয়।“ (তিরমিযী)
২৩. ((الْغِنَى غِنَى النَّفْسِ))
“অন্তরের সচ্ছলাতাই প্রকৃত সচ্ছলাতা।“(বুখারী) (অর্থাৎ যে ব্যক্তি মনের দিক দিয়ে ধনী সেই আসল ধনী, শুধু অর্থ-সম্পদ বেশি থাকলেই ধনী হওয়া যায় না।)
২৪. “হে লোক সকল! তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও, মানুষকে খাবার খাওয়াও আর মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন সালাত আদায় কর তবে শান্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করবে।“ (তিরমিযী)
২৫. لَا تَأْكُلُوا بِالشِّمَالِ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِالشِّمَالِ
“বাম হাতে খেওনা। কারণ শয়তান বাম হাতে খায়।“ (মুসলিম)
২৬. لَا تَسُبُّوا الْأَمْوَاتَ
“তোমরা মৃতদেরকে গালি দিও না।“ (বুখারী)
২৭. لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لِأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ
“তোমাদের কেউ প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে অন্য ভাইয়ের জন্যও তাই পছন্দ করবে।” (বুখারী)
২৮. قُلْ آمَنْتُ بِاللَّهِ ثُمَّ اسْتَقِمْ
“বল, আল্লাহর উপর ঈমান আনলাম। অতঃপর তার উপর অবিচল থাক।“ (মুসলিম)
২৯. الْبِرُّ حُسْنُ الْخُلُقِ وَالْإِثْمُ مَا حَاكَ فِي صَدْرِكَ وَكَرِهْتَ أَنْ يَطَّلِعَ عَلَيْهِ النَّاسُ
“মানুষের সাথে সুন্দর আচরণ করা হল নেকীর কাজ। আর ঐ কাজটাই পাপ যা তোমার মনে খটকা লাগে হয় এবং মানুষ সেটা জেনে ফেলাকে অপছন্দ কর।“ (মুসলিম)
৩০. إِنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أَحْسَنَكُمْ أَخْلَاقًا
“নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই উত্তম যার চরিত্র সবচেয়ে মাধুর্যপূর্ণ।“ (বুখারী)
৩১.مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ
“তোমাদের কেউ অন্যায় দেখলে তার কর্তব্য হল, (সাধ্য থাকলে) হাতের মাধ্যমে তা প্রতিহত করা, না পারলে মুখের ভাষা দ্বারা, তাও না পারলে অন্তর দ্বারা। আর এটাই হল দূর্বলতম ঈমানের পরিচয়।“ (মুসলিম)
৩২. خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ
“তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়।“ (বুখারী)
৩৩. ارْحَمُوا مَنْ فِي الْأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ
“তোমরা পৃথিবী অধিবাসীদের প্রতি দয়া কর যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।“ (তিরমিযী)
৩৫. لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ نَمَّامٌ
“চুগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।“ (মুসলিম)
৩৬. لْحَيَاءُ مِنْ الْإِيمَانِ
“লজ্জা ঈমানের অংশ।” (বুখারী)

Monday, September 3, 2012

মা

•রাসূল (সা:) বলেছেনঃ বেহেশ্ত হচ্ছে মায়েদের পায়ের নিচে।
কানযুল উম্মালঃ ৪৫৪৩৯, মুনতাখাবে মিযানুল হিকমাহঃ ৬১৪


• রাসূলে কারিম (সা) বলেছেনঃ নারীর প্রতি সবচেয়ে বেশি অধিকার হচ্ছে তার স্বামীর,আর পুরুষের উপর সবচেয়ে বেশি অধিকার হচ্ছে তার মায়ের।
কানযুল উম্মালঃ ৪৪৭৭১, মুনতাখাবে মিযানুল হিকমাহঃ ২৫৪

•রাসূলুল্লা( স:)বলেন, তিন রকম দোয়া নিসন্দেহে কবুল হয়। 
মজলুমের দোয়া, 
মুসাফিরের দোয়া 
আর সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া।
তিরমিযী

হাজরে আসওয়াদের ফজীলত

অনেক হাদীসে হাজরে আসওয়াদের ফজীলত প্রমানিত হয়েছে, এবং তাওয়াফ কালে তাকে স্পর্শ ও চুমো দেওয়ায় উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এর ফজীলতের দলিল হিসেবে নবীজির হাতের স্পর্শ এবং তাঁর পবিত্র মুখের চুম্বনই যথেষ্ট।

● উমর বিন
খাত্তাব (রাঃ) হাজরে আসওয়াদে চুম্বন দেন এবং বলেন-
“আমি জানি তুমি পাথর মাত্র, তোমার লাভ লোকসানের কোন ক্ষমতা নেই। আমি যদি নবীজিকে তমায় চুম্বন দিতে না দেখতাম তাহলে আমি তোমাকে চুম্বন দিতাম না।”(বুখারী ১৫৯৭, মুসলিম ১২৭০)

● ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-
“হাজরে আসওয়াদ যখন জান্নাত থেকে নেমে আসে তখন দুধের চেয়েও সাদা ছিল; কিন্তু আদম সন্তানের পাপ তাকে কালো করে দেয়।” (তিরমিজীঃ৮৭৭)

● ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) হাজরে আসওয়াদ সম্পর্কে বলেছেন-
“আল্লাহর কসম! তিনি কিয়ামতের দিন হাজরে আসওয়াদকে দুটি চোখ ও একটি জিহ্বা সম্পন্ন অবস্থায় হাজির করবেন। চোখ দুটি দ্বারা দর্শন ও জিহ্বা দ্বারা কথা বলবে এবং যে ব্যক্তি দুনিয়াতে ঈমানের সাথে তাকে চুম্বন দিয়েছে তার জন্য সাক্ষ্য দেবে।” (তিরমিজীঃ ৭৬১)

● আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) নিজ কানে হাত রেখে তিনবার বলেন, আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি- “হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইব্রাহীম এ দুটি জান্নাতের জ্যোতিময় পাথর ছিল, আল্লাহ যদি এ দুটির জ্যোতি বিলুপ্ত না করতেন তাহলে আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে অথবা পশ্চিম ও পূর্ব দিগন্তে যা আছে সবই আলোকিত করে দিত।”(মুসনাদে আহমদ ২/২১৪)

● ‘ইব্রাহীম (আঃ) কা’বা নিরমানের কাজ শেষ করেন; কিন্তু একটি পাথর রাখার মতো জায়গা বাকী থেকে যায়। ইসমাঈল (আঃ) [ঐ খালি স্থানটি পূরণ করার জন্য] কোন একটি পাথর খুজতে আরম্ভ করেন। তখন ইব্রাহীম (আঃ) তাকে বলেন, আমি তোমাকে যেরকম পাথর আনতে বলেছি ঠিক সেই রকম নিয়ে এসো, তিনি পাথর খুঁজতে বেরিয়ে যান। যখন তিনি পাথর নিয়ে হাজির হন তখন দেখেন যে ইব্রাহীম (আঃ) ঐ স্থানে একটি পাথর বসিয়ে ফেলেছেন। অতঃপর তিনি বলেন, আব্বাজান এ পাথর কে নিয়ে এসেছে? প্রত্যুত্তরে বলেন, ঐ ব্যক্তি নিয়ে এশেচেহ যিনি তোমার নির্মাণ কাজের মুখাপেক্ষী নন। এটি জিব্রাঈল (আঃ) আকাশ থেকে নিয়ে এসেছেন।’*

*[এটি হাদীসের অংশ, মারফু হাদীসের পর্যায়ে যদিও সেটি আলী (রাঃ) পর্যন্ত মাওকুফ, দেখুন তাফসীর ইবনে কাসীর -১/২৫৮, তাফসীরে তাবারী, সূরা বাকারাহঃ ১২৭।]
উৎসঃ বই- পবিত্র মক্কার ইতিহাস, দারুসসালাম পাবলিকেশন্স

পর্দা (পুরুষ)

"মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।"[সূরা আন-নূর -৩০]

(তাফহীমূল কুরান) একবার হঠাৎ নজর পড়ে গেলে ক্ষমাযোগ্য। কিন্তু প্রথম দৃষ্টিতে আকর্ষণীয় মনে হলে সেখানে আবার দৃষ্টিপাত করা ক্ষমারযোগ্য নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ধরনের দেখাকে চোখের যিনা বলেছেন । তিনি বলেছেনঃ মানুষ তার সমগ্র ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে যিনা করে। দেখা হচ্ছে চোখের যিনা, ফুসলানো কন্ঠের যি
না, তৃপ্তির সাথে কথা শোনা কানের যিনা, হাত লাগানো ও অবৈধ উদ্দেশ্য নিয়া চলা হাত ও পায়ের যিনা । ব্যভিচারের এ যাবতীয় ভূমিকা যখন পুরোপুরি পালিত হয় তখন লজ্জাস্থানগুলো তাকে পূর্ণতা দান করে অথবা পূর্ণতা দান থেকে বিরত থাকে । (বুখারী, মুসলিম ও আবু দাউদ ) হযরত বুরাইদাহ বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলীকে (রা) বলেনঃ ----------''হে আলী! এক নজরের পর দ্বিতীয় নজর দিয়ো না । প্রথম নজর তো ক্ষমাপ্রাপ্ত কিন্তু দ্বিতীয় নজরের ক্ষমা নেই।''(আহমাদ,তিরমিযী, আবু দাউদ, দারেমী)

হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ বাজালী বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, হঠাৎ চোখ পড়ে গেলে কি করবো৷ বললেন, চোখ ফিরিয়ে নাও অথবা নামিয়ে নাও। (মুসলিম, আহমাদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসাঈ) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়ালাহু আনহু রেওয়ায়াত করেছেন, নবী (সা) আল্লাহর উক্তি বর্ণনা করেছেনঃ

''দৃষ্টি হচ্ছে ইবলীসের বিষাক্ত তীরগুলোর মধ্য থেকে একটি তীর, যে ব্যক্তি আমাকে ভয় করে তা ত্যাগ করবে আমি তার বদলে তাকে এমন ঈমান দান করবো যার মিষ্টি সে নিজের হৃদয়ে অনুভব করবে''। (তাবারানী)

আবু উমামাহ রেওয়ায়াত করেছেন, নবী (সা) বলেনঃ

'' যে মুসলমানের দৃষ্টি কোন মেয়ের সৌন্দর্যের ওপর পড়ে এবং এ দৃষ্টি সরিয়ে নেয়, এ অবস্থায় আল্লাহ তার ইবাদাতে বিশেষ স্বাদ সৃষ্টি করে দেন।'' (মুসনাদে আহমাদ)

Monday, June 18, 2012

জামা'আতে সালাত আদায়

★আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুল (সঃ) বলেছেন ঃ " যে ব্যাক্তি সকালে বা সন্ধ্যায় যতবার মাসজিদে যায় , আল্লাহ্‌ তা'আলা তাঁর জন্য জান্নাতে ততবার মেহমানদারীর ব্যাবস্থা করে রাখেন" [বুখারী ৬৬২]

★আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুল (সঃ) বলেছেন ঃ " কোন ব্যাক্তির জামা'আতের সাথে সালাতের সওয়াব , তাঁর নিজের ঘরে ও বাজারে আদায়কৃত সালাতের সওয়াবের চেয়ে পঁচিশ গুন বাড়িয়ে দেয়া হয়। এর কারণ এই যে, সে যখন উত্তমরূপে ওযু করে, একমাত্র সালাতের উদ্দেশ্য মাসজিদে রওনা হয় তখন তাঁর প্রতি কদমের বিনিময়ে একটি মরতবা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি গুনাহ মাফ করা হয়। সালাত আদায়ের পর যতক্ষন সে নিজ সালাতের স্থানে থাকে ততক্ষন মালাকগন তাঁর জন্য এ বলে দুয়া করতে থাকেন - ' হে আল্লাহ্‌! আপনি তাঁর উপর রহমত বর্ষণ করুন এবং তাঁর প্রতি অনুগ্রহ করুন' আর তোমাদের কেউ যতক্ষন সালাতের অপেক্ষায় থাকে ততক্ষন সে সালাতে রত বলে গন্য হয় " [ বুখারী ৬৪৭]

★আবু মুসা ( রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী (সঃ) বলেছেন ঃ " (মাসজিদ হতে) যে যত অধিক দূরত্ব অতিক্রম করে আসে, তাঁর তত অধিক পুন্য হবে। আর যে ব্যাক্তি ইমামের সঙ্গে সালাত আদায় করা পর্যন্ত অপেক্ষা করে , তাঁর পুন্য সে ব্যাক্তির চেয়ে অধিক , যে একাকী সালাত আদায় করে ঘুমিয়ে পড়ে। " [ বুখারী ৬৫১]

আবূ হুরায়রা (রা:) নবী (সা:) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন: “কোন ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যায় যতবার মসজিদে যাতায়াত করে, আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতে ততবারে মেহমানদারীর সামগ্রী তৈরী করে রাখেন।” [বুখারী:... ৬৬২]

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মসজিদ হতে যার অবস্থান (বাসস্থান) যতদূরে, সে তত অধিক ছওয়াবের অধিকারী। (ইবনে মাজাহ-৫৫৬)

“সুতরাং দুর্ভোগ সে সব নামাযীর জন্য, যারা তাদের নামাযের ব্যাপারে উদাসীন।” (সুরা মাউন ৪-৫)


Saturday, June 2, 2012

আয়াতুল কুরসী

আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি প্রতি ফরয নামায শেষে আয়াতুল কুরসী পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোন কিছু বাধা হবে না।"
সুনানে কুবরা,নাসায়ী,হাদীস নং ৯৯২৮
আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ,হাদীস : ৭৫৩২
আলমুজামুল আওসাত, তবারানী (হাদীস : ৮০৬৪)
আততারগীব ওয়াততারহীব,মুনযিরী, হাদীস : ২৩৭৬
মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/১২৮

লা -ইলাহা ইল্লাল্লাহু

“কোন মুসলমান যখন ‘লা -ইলাহা ইল্লাল্লাহু‘ (আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই) বলে তখন বাক্যটি আকাশসমূহ ছেদ করে যায়, এমনকি তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সামনে গিয়ে পৌঁছে।

আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তখন বলেন: “স্থির হও”; তখন বাক্যটি বলে, “আমি কি-করে স্থির হব?- যে আমাকে উচ্চারন করেছে, এখনও তাকে মাফ করা হয়নি!”

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তখন বলেন: “আমি তোমাকে এমন লোকের জিহ্বা দিয়ে উচ্চারন করিয়েছি; উচ্চারনের আগেই যাকে মাফ করে দিয়েছি”

[হাদীসে কুদসী]

মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া হারাম

আবূ বাকারাহ্ নুফাই’ বিন হারেস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় ও মারাত্মক গোনাহ্ সম্পর্কে বলবো না? এ কথাটা তিনি তিনবার বললেন। আমরা বললাম: অবশ্যই বলুন, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন: আল্লাহর সাথে শির্ক করা, পিতামাতার অবাধ্যতা; তিনি হেলান দিয়ে ছিলেন, অতঃপর (সোজা হয়ে) বসে বললেন: সাবধান! মিথ্যা কথা বলা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। এ কথাটি তিনি বার বার বলতে ছিলেন, এমনকি আমরা বলতে লাগলাম- আহা! যদি তিনি থেমে যেতেন।” [মুত্তাফাকুন 'আলাইহি, বুখারী: ৫৯৭৬, মুসলিম: ৮৭]

জাহান্নামের সবচেয়ে লঘু শাস্তি

নু’মান ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ “কেয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্যে সবচাইতে লঘু শাস্তি প্রাপ্ত ব্যক্তির শাস্তি হবে এই যে, তার দুই পায়ের তালুর নিচে আগুনের দু’টি অংগার রাখা হবে এবং তাতে তার মস্তিষ্ক সিদ্ধ হতে থাকবে। সে মনে করবে, তার চাইতে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি আর কেউ হয়নি। অথচ সে-ই জাহান্নামীদের মধ্যে সবচাইতে হালকা/কম শাস্তিপ্রাপ্ত।” (ইমাম বুখারী: ৬৫৬২ ও ইমাম মুসলিম: ২১৩ এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন)

হাশরের ময়দানে মানুষ তিন দলে বিভক্ত হবে


আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: কেয়ামতের দিন লোকদেরকে তিনটি দলে বিভক্ত করে একত্রিত করা হবে। (প্রথম দল- আল্লাহর রহমতের) আশাবাদী এবং (তাঁর আযাবের) ভয়ে ভীত। (দ্বিতীয় দল-সেসব লোক) যাদের দু’জন থাকবে এক উটের উপর, কোন উটের উপর তিনজন, কোনটির উপর চারজন, আর কোনটির উপর সওয়ার হবে দশ জন। (তৃতীয় দল হবে) অবশিষ্টরা, আগুন যাদেরকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে। তারা যেখানে শয়ন করবে আগুনও তাদের সাথে থাকবে, তারা যেখানে রাত্রি যাপন করবে আগুন তাদের সাথে রাত কাটাবে, যেখানে তাদের সকাল হবে আগুন তাদের সাথে থাকবে, আর যেখানে তাদের সন্ধ্যা হবে একই সাথে আগুনও তাদের সাথে সাথে থাকবে।” [বুখারী: ৬৫২২]

গোসল


গোসলের ফরয তিনটিঃ

১. ভালভাবে একবার কুলি করা।
(সূরা মায়িদা, আয়াত নং ৬)
২. নাকের নরম স্থান পর্যন্ত একবার পানি পৌঁছানো।
(ঐ)
৩. সমস্ত শরীরে একবার পানি পৌঁছে দেয়া, যেন কোথাও এক চুল পরিমাণ শুকনো না থাকে।
(ঐ/ তিরমিযী, ১০৩; আল বাহরুর রায়িক, ১ : ৪৫/ শামী, ১ : ১৫১)


গোসলের সুন্নাতসমূহঃ

১. ফরয গোসলের পূর্বে ইস্তিঞ্জা অর্থাত পেশাব করা।
(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাঃ নং ১০২০)
২. শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়া।
(মুসনাদে আহমাদ, হাঃ নং ১২৬৯৪)
৩. পৃথকভাবে উভয় হাত কব্জিসহ ধোয়া।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ২৪৮)
৪. শরীর বা কাপড়ের কোন স্থানে নাপাকী লেগে থাকলে প্রথমে তা তিনবার ধুয়ে পবিত্র করে নেয়া।
(মুসলিম শরীফ, হাঃ নং ৩২১)
৫. নাপাকী লেগে থাকলে বা না লেগে থাকলে সর্ব অবস্থায় গুপ্তাঙ্গ ধৌত করা। এরপর উভয় হাত ভালভাবে ধুয়ে নেয়া।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ২৪৯)
৬. সুন্নাত তরীকায় পূর্ণ উযু করা। তবে গোসলের স্থানে পানি জমে থাকলে, গোসল শেষ করে পা ধৌত করবে।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ২৬০)
৭. প্রথমে মাথায় পানি ঢালা।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ২৫৬)
৮. এরপর ডান কাঁধে।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ২৫৪)
৯. এরপর বাম কাঁধে।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ২৫৪)
১০. অতঃপর অবশিষ্ট শরীর ভিজানো।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ২৭৪)
১১. সমস্ত শরীরে এমনভাবে তিনবার পানি পৌঁছানো, যেন একটি পশমের গোড়াও শুষ্ক না থাকে।
(আবু দাউদ, হাঃ নং ২৪৯/ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাঃ নং ৮১৩)

তবে নদী-পুকুর ইত্যাদিতে গোসল করলে কিছুক্ষণ ডুব দিয়ে থাকলেই তিন বার পানি ঢালার সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে।
(আবু দাউদ, হাঃ নং ২৪৯/ মুসান্নাফে ইবনে আবী মাইবা, হাঃ নং ৮১৩)
১২. সমস্ত শরীর হাত দ্বারা ঘষে-মেজে ধৌত করা।
(তিরমিযী, হাঃ নং ১০৬)

যে ব্যক্তি যাকে ভালোবাসে সে তার সঙ্গেই থাকবে

আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললঃ ইয়া রাসূল্লাল্লাহ, কিয়ামত সংঘটিত হবে কবে ?
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। সালাত সম্পাদন করে বললেনঃ কিয়ামত সংঘটিত হবার ব্যপারে প্রশ্নকারী কোথায় ?
লোকটি বললঃ হে আল্লাহর রাসূল, আমি।
তিনি বললেনঃ কিয়ামতের জন্য তুমি কি প্রস্তুতি নিয়েছ ?
লোকটি বললঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, খুব বেশী সালাত বা সাওম নিয়ে এর জন্য আমি প্রস্তুত হতে পারি নাই তবে, আমি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল কে ভালোবাসি।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি যাকে ভালোবাসে সে তার সঙ্গেই থাকবে। আর তুমিও তার সঙ্গেই থাকবে যাকে তুমি ভালোবাস।

আনাস (রা) বলেন, এই কথা শুনে মুসলিমদের যে আনন্দ হয়েছিল এর পর আর কোন বিষয়ে মুসলিমদেরকে এত আনন্দিত হতে আমি দেখিনি।
[তিরমিযী, ২৩৮৮]

Monday, May 28, 2012

রাস্তার কষ্টদায়ক বস্তু দূর করার ফযীলতঃ


আয়িশা (রা) হতে বর্ণীতঃ

রাসূল (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মানুষের চলাচলের পথের একটি গর্ত বন্ধ করে আল্লাহ্‌ জান্নাতে তাঁর জন্য একটি ঘর তৈরি করবেন এবং তাঁর সম্মান বৃদ্ধি করবেন।
  সিলসিলাহ সহীহাহ, হাদীস ১৮৯২

আনাস (রা) হতে বর্ণীতঃ  তিনি বলেন, একটি গাছের কারণে লোকজনের চলাচলে অসুবিধা হতো। এই অবস্থা দেখে এক লোক এসে গাছটিকে লোকজনের চলাচলের পথ থেকে সরিয়ে ফেললো।
আনাস (রা) বলেন, রাসূল (সা) বলেছেনঃ আমি ঐ ব্যক্তিকে জান্নাতের ছায়ায় ঘোরাফেরা করতে দেখেছি।
সহীহ আত-তারগীব, হাদীস ২৯৭৭

Sunday, May 27, 2012

হাদিসের আলোকে সফরের আদব


বৃহস্পতিবার সকালে সফরে বের হওয়া উত্তম
কা’ব ইবনে মালেক (রা: ) হতে বর্নিত, নবী (সা:) তাবুক অভিযানে বৃহস্পতিবার বের হলেন। আর তিনি বৃহস্পতিবার (সফরে) বের হওয়া পছন্দ করতেন। (বুখারী, মুসলিম)১

বুখারী-মুসলিমের অন্য এক বর্ননায় আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৃহস্পতিবার ছাড়া অন্য দিনে কমই সফরে হতেন।
(প্রকাশ থাকে যে, বৃহস্পতিবার সফরে বের হওয়ার কথা মুসলিম শরীফে নেই।)

স্বাখ্র ইবনে অদাআহ গামেদী (রা:) হতে বর্নিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “হে আল্লাহ! তমি আমার উম্মতের জন্য তাদের সকালে বরকত দাও।” আর তিনি যখন সেনার ছোট বাহিনী অথবা বড় বাহিনী পাঠাতেন, তখন তাদেরকে সকালে রওয়ানা করতেন। স্বাখ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। সুতরাং তিনি তাঁর ব্যবসার পণ্য সকালেই প্রেরন করতেন। ফলে তিনি (এর বর্কতে)ধনী হয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁর মাল প্রচুর হয়েছিল। (আবু দাউদ, তিরমিযী হাসান)২

সফরের জন্য সাথী খোঁজ করা এবং কোন একজনকে আমীর (দলপতি) নিযুক্ত করে তার আনুগত্য করা শ্রেয়
ইবনে উমার (রা:) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “যদি লোকেরা জানত যে, একাকী সফরে কী ক্ষতি রয়েছে; যা আমি জানি, তাহলে কোন সওয়ারী একাকী সফর করত না।” (বুখারী)৩

আমর ইবনে শুআইব তাঁর পিতা হতে এবং তিনি তাঁর দাদা (আব্দুল্লাহ ইবনে আমর) হতে বর্ননা করেছেন, রাসূলুল্লাহ  (সা:) বলেছেন, “একজন (সফরকারী) আরোহী একটি শয়তান এবং দু’জন আরোহী দু’টি শয়তান। আর তিনজন আরোহী একটি কাফেলা।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ বিশুদ্ধসূত্র)৪

আবূ সাঈদ ও আবূ হুরাইরা (রায্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “যখন তিন ব্যক্তি সফরে বের হবে, তখন তারা যেন তাদের একজনকে আমীর বানিয়ে নেয়।” (আবূ দাউদ হাসান সূত্রে)৫

ইবনে আব্বাস (রা:) কর্তৃক বর্নিত, নবী (সা:) বলেছেন, “সর্বোত্তম সঙ্গী হল চারজন, সর্বোত্তম ছোট সেনাবাহিনী হল চারশ’ জন, সর্বোত্তম বড় সেনাবহিনী হল চার হাজার জন। আর বারো হাজার সৈন্য স্বল্পতার কারনে কখনো পরাজিত হবে না।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, হাসান)৬

সফরে চলা, বিশ্রাম নিতে অবতরণ করা, রাত কাটানো এবং সফরে ঘুমানোর আদব-কায়দা। রাতে পথচলা মুস্তাহাব, সওয়ারী পশুদের প্রতি নম্রতা প্রদর্শন করা এবং তাদের বিশ্রামের খেয়াল রাখা। যে তাদের অধিকারের ব্যাপারে ত্রুটি করে তাকে তাদের অধিকার আদায়ের নির্দেশ দেওয়া। সওয়ারী সমর্থ হলে আরোহীর নিজের পিছনে অন্য কাউকে বসানো বৈধ।
আবূ হুরাইরা (রাJ বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “যখন তোমরা সবুজ-শ্যামল ঘাসে ভরা যমীনে সফর করবে, তখন উটকে তার যমীনের অংশ দাও (অর্থাৎ, কিছুক্ষন চরতে দাও)। আর যখন তোমরা ঘাস-পানিবিহীন যমীনে সফর করবে, তখন তার উপর চড়ে দ্রুত চলো এবং তার শক্তি শেষ হওয়ার পূর্বেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাও। আর যখন তোমরা রাতে বিশ্রামের জন্য কোন স্থানে অবতরন করবে, তখন আম রাস্তা থেকে দূরে থাকো। কারন, তা রাতে (হিংস্র) জন্তুদের রাস্তা এবং (বিষাক্ত) পোকামাকড়ের আশ্রয় স্থল।” (মুসলিম)৭

আবূ ক্বাতদাহ (রা:) বলেন, ’রাসূলুল্লাহ (সা:) যখন সফরে থাকতেন এবং রাতে বিশ্রামের জন্য কোথাও অবতরন করতনে, তখন তিনি ডান পার্শ্বে শয়ন করতেন। আর তিনি ফজরের কিছুক্ষন পূর্বে বিশ্রাম নিলে তার হাতটা খাড়া করে হাতের চেটোর উপর মাথা রেখে আরাম করতেন।’ (মুসলিম)৮

উলামাগন বলেন, ‘তিনি হাত খাড়া রেখে আরাম করতেন, যাতে গভীর নিদ্রা এসে ফজরের নামাযের ওয়াক্ত অথবা প্রথম ওয়াক্ত ছুটে না যায়।’
আনাস (রা:) বলেন রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “তোমরা রাতে সফর কর। কেননা, রাতে যমীনকে গুটিয়ে দেওয়া হয়।” (অর্থাৎ, রাস্তা কম মনে হয়।) (আবূ দাউদ, হাসান সূত্রে)৯

আবূ সা’লাব খুশানী (রা:) বলেন, লোকেরা যখন কোন স্থানে অবতরন করতেন, তখন তাঁর গিরিপথ ও উপত্যকায় ছড়িয়ে যেতেন। রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন, “তোমাদের এ সকল গিরিপথে ও উপত্যকায় বিক্ষিপ্ত হওয়া শয়তানের কাজ।” এরপর তাঁরা যখনই কোন মঞ্জিলে অবতরন করতেন, তখন একে অপরের সাথে মিলিত হয়ে থাকতেন। (আবূ দাউদ)১০

সাহল ইবনে আমর (রা:) মতান্তরে সাহল ইবনে রাবী ইবনে আমর (রা:) আনসারী – যিনি ইবনুল হানযালিয়্যাহ নামে প্রসিদ্ধ এবং ইনি বায়আতে রিযওয়ানে অংশ গ্রহনকারীদের মধ্যে একজন—তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) একটা উটের পাশ দিয়ে গেলেন, যার পিঠটা (দুর্বলতার কারনে) পেটের সাথে লেগে গিয়েছিল। (তা দেখে) তিনি বললেন, “তোমরা এ সব অবোলা জন্তুর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। সুতরাং তোমরা তাদের সুস্থ থাকা অবস্থায় আরোহন কর এবং তাদের সুস্থ থাকা অবস্থায় মাংস খাও।” (আবূ দাউদ, বিশুদ্ধ সূত্র)১১

আবূ জা’ফর আব্দুল্লাহ ইবনে জা’ফর (রা:) বলেন, ‘একদা রাসূলুল্লাহ (সা:) আমাকে সওয়ারীর উপর তাঁর পিছনে বসালেন এবং আমাকে তিনি একটি গোপন কথা বললেন, যা আমি কাউকে বলব না। আর রাসূলুল্লাহ (সা:) উঁচু জায়গা (দেওয়াল, ঢিবি ইত্যাদি) অথবা খেজুরের বাগানের আড়ালে মল-মূত্র ত্যাগ করা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন।’ (ইমাম মুসলিম এটিকে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ননা করেছেন)
বারক্বানী এতে মুসলিমের সূত্রে বর্ধিত আকারে ‘খেজুরের বাগান’ শব্দের পর বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা:) এক আনসারীর বাগানে প্রবেশ ক’রে সেখানে একটা উট দেখতে পেলেন। উটটা রাসূলুল্লাহ (সা:) কে দেখে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল এবং তার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। নবী (সা:) তাঁর কাছে এসে তার কুঁজে এবং কানের পিছনের অংশে হাত ফিরালেন, ফলে সে শান্ত হল। এরপর তিনি বললেন, ”এ উটের মালিক কে? এই উটটা কার?” অত:পর আনসারদের এক যুবক এসে বলল, ‘এটা আমার হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, “তুমি কি এই পশুর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো না, আল্লাহ তোমাকে যার মালিক বানিয়েছেন? কারন, সে আমার নিকট অভিযোগ করছে যে, তুমি তাকে ক্ষুধায় রাখ এবং (বেশি কাজ নিয়ে) ক্লান্ত ক’রে ফেলো।” (আবূ দাউদ)১২

আনাস (রা:) বলেন, ‘আমরা যখন (সফরে) কোন মঞ্জিলে অবতরন করতাম, তখন সওয়ারীর পালান নামাবার পূর্বে নফল নামায পড়তাম না।’ (আবূ দাউদ, মুসলিমের শর্তে)১৩

অর্থাৎ, আমরা নামাযের প্রতি আগ্রহী হওয়া সত্ত্বেও সওয়ারীর পিঠ থেকে পালান নামিয়ে তাকে আরাম না দেওয়ার আগে নামায পড়তে শুরু করতাম না।

সফরের সঙ্গীকে সাহায্য করা প্রসঙ্গে
আপরকে সাহায্য করার বিষয়ে অনেক হাদীস পূর্বে বর্নিত হয়েছে। যেমন ‘আল্লাহ বান্দাকে সাহায্য করেন; যতক্ষন বান্দা তার ভাইকে সাহায্য করে।’ ‘প্রত্যেক ভাল কাজ সাদকাহ স্বরূপ।’ ইত্যাদি।
আবূ সাঈদ খুদরী (রা:) বলেন, একদা আমরা সফরে ছিলাম। ইত্যবসরে এক ব্যক্তি তার সওয়ারীর উপর চড়ে এল। অত:পর তার দৃষ্টি ডানে ও বামে ফেরাতে লাগল। রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন, “যার বাড়তি সওয়ারী আছে, সে যেন তা তাকে দেয় যার সওয়ারী নেই এবং যার অতিরিক্ত সফরের সম্বল রয়েছে, সে যেন সম্বলহীন ব্যক্তিকে দেয়।” অত:পর তিনি আরো কয়েক প্রকার মালের কথা বললেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত আমরা ধারনা করলাম যে, বাড়তি মালে আমাদের কারোর কোন অধিকার নেই। (মুসলিম)১৪

জাবের (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছা করলেন। অত:পর তিনি বললেন, “হে মুহাজির ও আনসারের দল! তোমাদের ভাইদের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে, যাদের কোন মাল নেই, স্বগোত্রীয় লোকও নেই। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকে যেন দুই অথবা তিনজনকে সঙ্গে করে নেয়। কারন, আমাদের কারও এমন কোন সওয়ারী নেই, যা তাদের সাথে পালাক্রমে ছাড়া তাকে বহন করতে পারে।” জাবের (রা:) বলেন, সুতরাং আমি দু’জন অথবা তিনজনকে সাথে নিলাম। অন্যান্যদের মত আমার উটেও তাদের সাথে পালাক্রমে চড়তাম। (আবূ দাউদ)১৫

উক্ত রাবী (রা:) হতে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ (সা:) সফরে (সকলের) পিছনে চলতেন। তিনি দুর্বলকে চলতে সাহায্য করতেন এবং তাকে পিছনে বসিয়ে নিতেন ও তার জন্য দুআ করতেন। (আবূ দাঊদ হাসান সূত্রে)১৬

কোন সওয়ারী বা যানবাহনে চড়ার সময় দুআ
আল্লাহ তাআলা বলেন,
যিনি সবকিছুর যুগলসমূহ সৃষ্টি করেছেন এবং নৌকা ও চতুষ্পদ জন্তুকে তোমাদের যানবাহনে পরিনত করেছেন। যাতে তোমরা ওদের পিঠে স্থিরভাবে বসে তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ স্মরন করতে পার, পবিত্র মহান তিনিই যিনি একে আমাদের বশীভূত ক’রে দিয়েছেন; যদিও আমরা একে বশীভূত করতে সমর্থ ছিলাম না। অবশ্যই আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তনকারী। (সুরা যুখরুফ ১২-১৪ আয়াত)
ইবনে উমার (রা:) হতে বর্নিত, রসূল (সা:) যখন সফরে বেরিয়ে উটের পিঠে স্থির হয়ে বসতেন, তখন তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ পড়ে এই দু’আ পড়তেন,
’সুবহানাল্লাযী সাখ্ খারা লানা হা-যা অমা কুন্না লাহু মুক্বরিনীন। অইন্না ইলা রাব্বিনা লামুনক্বালিবুন। আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা সাফারানা হা-যাল বির্রা অত্তাক্বওয়া, অমিনাল আমালি মা তারয্বা। আল্লাহুম্মা হাওবিন আলাইনা সাফারানা হা-যা অত্ববি আন্না বু’দাহ। আল্রাহুম্মা আন্তাস সাহিবু ফিস সাফারি অলখালীফাতু ফিল আহল। আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিন অ’সাইস সাফার আকাআবাতিল মানযার, অসূইল মুনক্বালাবি ফিল মা-লি অল আহলি অল অলাদ।’
অর্থাৎ, পবিত্র ও মহান যিনি একে আমাদের বশীভূত ক’রে দিয়েছেন যদিও আমরা একে বশীভুত করতে সমর্থ ছিলাম না। অবশ্যই আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তনকারী। ওগো আল্লাহ! নিশ্চয় আমরা তোমার কাছে প্রার্থনা করছি আমাদের এই যাত্রায় পুন্যকর্ম, সংযমশীলতা এবং তোমার সন্তোষজনক কার্যকলাপ। হে আল্লাহ! আমাদের এ যাত্রাকে আমাদের জন্য সহজ ক’রে দাও। আমাদের থেকে ওর দূরত্ব গুটিয়ে নাও। হে আল্লাহ! তুমিই সফরের সঙ্গী। আর পরিবার পরিজনের জন্য (আমাদের) প্রতিনিধি। হে আল্লাহ! সফরের কষ্ট ও ক্লান্তি থেকে, ভয়ংকর দৃশ্য থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
আর বাড়ি ফিরার সময় উক্ত দুআর সাথে এগুলিও পড়তেন, ‘আ-ইবূনা, তা-ইবূনা আ-বিদূনা, লিরাব্বিনা হা-মিদূন।’ (মুসলিম)১৭

আব্দুল্লাহ ইবনে সার্জিস (রা:) হতে বর্নিত , তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সা:) যখন সফর করতেন, তখন তিনি সফরের কষ্ট থেকে, দুশ্চিন্তাজনক পরিস্থিতি থেকে বা অপ্রীতিকর প্রত্যাবর্তন, পূর্ণতার পর হ্রাস থেকে, অত্যাচারিতের বদ্দুআ থেকে, মাল-ধন ও পরিবারের ক্ষেত্রে অপ্রীতিকর দৃশ্য থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। (মুসলিম)১৮

আলী ইবনে রাবীআহ (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি আলী ইবনে আবু ত্বালেব (রা:) এর নিকট হাজির ছিলাম। যখন তাঁর নিকট আরোহন করার উদ্দেশ্যে বাহন আনা হল এবং যখন তিনি বাহনের পাদানে স্বীয় পা রাখলেন তখন ‘বিসমিল্লাহ’ বললেন। অত:পর যখন তার পিঠে স্থির হয়ে সোজভাবে বসলেন তখন বললেন, ‘আমহামদু লিল্লাহিল্লাযী সাখখারা লানা হা-যা ‍অমা কুন্না লাহু মুক্বরিনীন। আইন্না ইলা রাব্বিনা লামুনক্বালিবূন।’ অত:পর তিনবার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়লেন। অত:পর তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ পড়লেন। অত:পর পড়লেন, ‘সুবহানাকা ইন্নী যালামতু নাফসী ফাগফিরলী, ইন্নাহু লা য়্যাগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আন্ত।’ অত:পর তিনি হাসলেন। তাঁকে জিঞ্জাসা করা হল, ‘হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি হাসলেন কেন?’ তিনি বললেন, ‘আমি নবী (সা:) কে দেখলাম, তিনি তাই করলেন, যা আমি করলাম। অত:পর তিনি হাসলেন। আমি প্রশ্ন করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি হাসলেন কেন?’ তিনি বললেন, “তোমার মহান প্রতিপালক তাঁর সেই বান্দার প্রতি আশ্চর্যান্বিত হন, যখন সে বলে, ’ইগফিরলী যুনূবী’ (অর্থাৎ, আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দাও।) সে জানে যে, আমি (আল্লাহ) ছাড়া পাপরাশি আর কেউ মাফ করতে পারে না।” (আবু দাউদ, তিরমিযী হাসান, কোন কোন কপিতে আছে, ’হাসান সহীহ’। আর এ শব্দমালা আবূ দাউদের।) ১৯

উঁচু জায়াগায় চড়ার সময় মুসাফির ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে এবং নীচু জায়গায় নামবার সময় ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে। ‘তকবীর’ ইত্যাদি বলার সময় অত্যন্ত উচ্চ:স্বরে বলা নিষেধ
জাবের (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, আমরা (সফরে) যখন উঁচু জায়গায় চড়তাম তখন ‘আল্লাহু আকবার’ বলতাম এবং নীচু জায়গায় নামতাম, তখন ‘সুবহানাল্লাহ’ বলতাম। (বুখারী)২০

ইবনে উমার (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, নবী (সা:) ও তাঁর সেনা বাহিনী যখন উঁচু জায়গায় চড়তেন তখন ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন। আর যখন নিচু জায়গায় নামতেন তখন ‘সুবহানাল্লাহ’ বলতেন। (আবূ দাউদ, বিশুদ্ধ সানাদে)২১

উক্ত রাবী (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, নবী (সা:) যখন হজ্জ কিম্বা উমরাহ সেরে ফিরে আসতেন, যখনই কোন পাহাড়ী উঁচু জায়গায় অথবা ঢিবিতে চড়তেন তখনই তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন। অত:পর তিনি বলতেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহদাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। আ-ইয়বূনা তা-ইবূনা সা-জিদূনা লিরাব্বিনা হা-মিদূন। সাদাক্বাল্লাহু ওয়া’দাহ, অনাসারা আব্দাহ্, অহাযামাল আহযাবা অহদাহ।’
অর্থাৎ, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁরই সার্বোভৌম অধিকার, যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই জন্য, আর তিনি প্রত্যেক বস্তুর উপর ক্ষমতাবান। আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তওবাকারী, ইবাদতগুযার, সাজদাহকারী, আমাদের প্রভুর প্রশংসাকারী। আল্লাহ তাঁর প্রতি্শ্রুতি সত্য প্রমানিত করেছেন, তাঁর বান্দাহকে মদদ করেছেন এবং একাই শত্রু বাহিনীকে পরাস্ত করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)২২

মুসলিমের অন্য বর্ননায় আছে, যখন তিনি বড় অথবা ছোট অভিযান অথবা হজ্জ বা উমরাহ থেকে ফিরতেন---।
আবূ হুরাইরা (রা:) হতে বর্নিত, এক ব্যক্তি নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি ইচ্ছা করেছি সফরে যাব আমাকে উপদেশ দিন।’ তিনি বললেন, “তুমি আল্লাহ-ভীতি অবলম্বন করো এবং প্রত্যেক উঁচু স্থানে নিয়মিত ‘আল্লাহু আকবার’ পড়ো।” যখন লোকটা পিছন ফিরে যেতে লাগল, তখন তিনি (তার জন্য দুআ ক’রে) বললেন, “আল্লাহুম্মাত্ববি লাহুল বু’দা অহাওবিন আলাইহিস সাফার।” অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি ওর পথের দূরত্ব গুটিয়ে দিয়ো এবং ওর জন্য সফর আসান ক’রে দিয়ো। (তিরমিযী হাসান)২৩

আবূ মূসা আশআরী (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, নবী (সা:) এর সাথে সফরে ছিলাম। আমরা যখন কোন উঁচু উপত্যকা চড়তাম তখন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার’ বলতাম। (একদা) আমাদের শব্দ উঁচু হয়ে গেল। নবী (সা:) তখন বললেন, “হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের প্রতি নম্রতা পদর্শন কর। কেননা, তোমরা কোন বধির ও অনুপস্থিতকে ডাকছ না। তিনি তো তোমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। তিনি সর্বশ্রোতা ও নিকটবর্তী।” (বুখারী ও মুসলিম)২৪
*(মহান আল্লাহ আরশে আছেন। কিন্তু তাঁর ঞ্জান, দৃষ্টি প্রভৃতি সর্বত্র আছে। সুতরাং তাঁকে শোনাবার জন্য এত উচ্চস্বরে তকবীর ইত্যাদি পড়া নিষ্প্রয়োজন।)

সফরে দুআ করা মুস্তাহাব
আবূ আব্দুল্লাহ (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ”তিনজনের দুআ সন্দেহাতীতভাবে গৃহীত হয়: ১) নির্যাতিত ব্যক্তির দুআ, ২) মুসাফিরের দুআ এবং ৩) ছেলের জন্য মাতা-পিতার বদ্দুআ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান)২৫

আবূ দাউদের বর্ননায় “ছেলের জন্য” শব্দগুলি নেই। (অর্থাৎ, তাতে আছে, “পিতা-মাতার দুআ।”)

মানুষ বা অন্য কিছু থেকে ভয় পেলে কী দুআ পড়বে?
আবূ মূসা আশআরী (রা:) হতে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ (সা:) যখন কোন শত্রুদলকে ভয় করতেন তখন এই দুআ পড়তেন, “আল্লাহুম্মা ইন্না নাজআ’লুকা ফী নুহূরিহিম অনাঊযু বিকা মিন শুরূরিহিম।” অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমরা তোমাকে ওদের মুখামুখি করছি এবং ওদের অনিষ্টকারিতা থেকে তোমার নিকট পানাহ চাচ্ছি। (আবূ দাউদ, নাসাঈ বিশুদ্ধ সূত্রে)২৬

কোন মঞ্জিলে (বিশ্রাম নিতে) অবতরন করলে সেখানে কী দুআ পড়বে?
খাওলা বিনতে হাকীম (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা:)-কে বলতে শুনেছি যে, “যে ব্যক্তি (সফরের) কোন মঞ্জিলে নেমে এই দুআ পড়বে, ‘আঊযু বিকালিমাতিল্লা-হিত্ তা-ম্মাতি মিন শার্রি মা খালাক্ব।’ (অর্থাৎ, আল্লাহর পরিপূর্ন বানীসমূহের অসীলায় তাঁর সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আমি আশ্রয় চাচ্ছি।) তাহলে সে মঞ্জিল থেকে অন্যত্র রওনা হওয়া পর্যন্ত কোন জিনিস তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (মুসলিম)২৭

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা:) হতে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ (সা:) যখন সফর করতেন এবং সফরে রাত্রি হয়ে যেতো, তখন তিনি বলতেন: ইয়া আরযু রাব্বী ও রাব্বুকিল্রাহ, আ’ঊযু বিল্লাহি মিন শাররিকি ওয়া শারবি মা ফীকি আসাদিন ওয়া আসওয়াদিন ওয়া মিনাল হাইয়্যাতি ওয়াল আক্বরাবি ওয়া মিন সাকিনিল বালাদি ওয়া মিন ওয়ালিদিও ওয়ামা ওয়ালাদ (হে মাটি! তোমার ও আমার প্রভু হচ্ছেন আল্লাহ তা’আলা। আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করি। তোমার অনিষ্ট থেকে এবং যা কিছু তোমার উপরে বিচরন করে তার অনিষ্ট থেকে। আর আমি আল্লাহর নিকট বাঘ ও কাল সাপ হতে এবং সর্ব প্রকার সাপ, বিচ্ছু হতে আর শহরবাসীদের অনিষ্টকারিতা হতে এবং জন্মদানকারী ও জন্মলাভকারীর অনিষ্টকারিতা হতে আশ্রয় চাই।) (আবূ দাউদ)২৮

প্রয়োজন পূরন হয়ে গেলে সফর থেকে অতি শীঘ্র বাড়ি ফিরা মুস্তাহাব
আবূ হুরাইরা (রা:) হতে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, “সফর আযাবের অংশ বিশেষ। সফর তোমাদেরকে পানাহার ও নিদ্রা থেকে বিরত রাখে। সুতরাং যখন তোমাদের কারোর সফরের উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে যাবে, তখন সে যেন বাড়ি ফিরবার জন্য তাড়াতাড়ি করে।” (বুখারী ও মুসলিম)২৯

সফর শেষে বাড়িতে দিনের বেলায় আসা উত্তম এবং অপ্রয়োজনে রাতের বেলায় ফিরা অনুত্তম
জাবের (রা:) হতে বর্নিত, রসূল (সা:) বলেন, “যখন তোমাদের কারের বিদেশের অবস্থান দীর্ঘ হবে, তখন সে যেন অবশ্যই রাত্রিকালে নিজ গৃহে না ফিরে।” (বুখারী ও মুসলিম)৩০

অন্য এক বর্ননায় আছে, আল্লাহর রসূল (সা:) নিষেধ করেছেন যে, (মুসাফির) পুরুষ যেন স্ত্রীর কাছে রাতের বেলায় প্রবেশ না করে।
(কেননা তাতে অনেক ধরনের ক্ষতি হতে পারে। যেমন, স্ত্রীকে অপ্রীতিকর বা অবাঞ্জনীয় অবস্থায় দেখে দাম্পত্যে অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে অথবা স্ত্রী তার জন্য সম্পূর্ন অপ্রস্তুত থাকতে পারে ইত্যাদি। তবে পূর্বেই যদি আগমন বার্তা জানিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে রাতের বেলায় বাড়ি গেলে কোন ক্ষতি নেই।)
আনাস (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা:) সফর শেষে রাত্রিকালে স্বীয় বাড়ি ফিরতেন না। তিনি সকালে কিম্বা বিকালে বাড়ি আগমন করতেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)৩১

সফর থেকে বাড়ি ফিরার সময় এবং নিজ গ্রাম বা শহর দেখার সময় দুআ
আনাস (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, একদা আমরা নবী (সা:) এর সঙ্গে সফর থেকে ফিরে এলাম। পরিশেষে যখন মদীনার উপকন্ঠে এসে উপকন্ঠে এসে উপনীত হলাম, তখন তিনি এই দুআ পড়লেন, ‘আ-ইবূনা, তা-ইবূনা, আ-বিদূনা, লিরাব্বিনা হা-মিদূন। (অর্থাৎ, আমরা সফর থেকে প্রত্যাগমনকারী, তওবাকারী, উপাসনাকারী, আমাদের প্রভুর প্রশংসাকারী।) মদীনায় আগমন না করা পর্যন্ত তিনি এ দুআ অনবরত পড়তে থাকলেন।(মুসলিম)৩২

সফর থেকে বাড়ি ফিরে প্রথমে বাড়ির নিকটবর্তী কোন মসজিদে দু’রাকআত নফল নামায পড়া মুস্তাহাব
কা’ব ইবনে মালেক (রা:) হতে বর্নিত, ‘রাসূলুল্লাহ (সা:) যখন সফর থেকে বাড়ি ফিরতেন, তখন সর্বপ্রথম মসজিদে গিয়ে দু’রাকআত নামায পড়তেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)৩৩

কোন মহিলার একাকিনী সফর করা হারাম
আবূ হুরাইরা (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি যে নারী ঈমান রাখে, তার মাহরামের সঙ্গ ছাড়া একাকিনী এক দিন এক রাতের দূরত্ব সফর করা বৈধ নয়।” (বুখারী ও মুসলিম)৩৪

ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বর্নিত, তিনি নবী (সা:)-কে বলতে শুনেছেন যে, “কোন পুরুষ যেন কোন বেগানা নারীর সঙ্গে তার সাথে এগানা পুরুষ ছাড়া অবশ্যই নির্জনতা অবলম্বন না করে। আর মাহরাম ব্যতিরেকে কোন নারী যেন সফর না করে।”
এক ব্যক্তি আবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার স্ত্রী হজ্জ পালন করতে বের হয়েছে। আর আমি অমুক অমুক যুদ্ধে নাম লিখিয়েছি।’ তিনি বললেন, “যাও, তুমি তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজ্জ কর।” (বুখারী ও মুসলিম)৩৫

*(যার সাথে চিরতরে বিবাহ হারাম তাকে মাহরাম বা এগানা বলা হয়; তার সাথে সফর বৈধ। বাকী যার সাথে কোনও সময় বিবাহ বৈধ, তাকে গায়র মাহরাম বা বেগানা বলা হয়। তার সাথে সফর করা বৈধ নয; এমনকি হজ্জের সফর হলেও নয়।)

১। সহীহুল বুখারী ২৯৪৯, ২৭৫৮, ২৯৪৭, ২৯৪৮, ২৯৫০, ৩০৮৮, ৩৫৫৬, ৩৮৮৯, ৩৯৫১, ৪৪১৮, ৪৬৭৩, ৪৬৭৬, ৪৬৭৭, ৪৬৭৮, ৬২৫৫, ৬৬৯০, ৭২২৫, মুসলিম ২৭৬৯, তিরমিযী ৩১০২, নাসায়ী ৩৮২৪, ৩৮২৬, আবূ দাউদ ২২০২, ৩৩১৭, ৩৩১৯, ৩৩২১, ৬৪০০ আহমাদ ১৫৩৪৩, ১৫৩৪৫, ১৫৩৫৪
২। ইবনু মাজাহ ২২৩৬, আবূ দাউদ ২৬০৬, আহমাদ ১৫০১২, ১৫০১৭, ১৫১২৯, ১৫১৩০, দারেমী ২৪৩৫
৩। সহীহুল বুখারী ২৯৯৮, তিরমিযী ১৬৭৩, ইবনু মাজাহ ৩৭৬৮, আহমাদ ৪৭৩৭, ৫২৩০, ৫৫৫৬, ৫৬১৮, দারেমী ২৬৭৯
৪। আবূ দাউদ ২৬০৭, তিরমিযী ১৬৭৪, আহমাদ ৬৭০৯, মওয়াত্তা মালিক ‍১৮৩১
৫। আবূ দাউদ ২৬০৮
৬। আবূ দাউদ ২৬১১, তিরমিযী ১৫৫৫, দারেমী ২৪৩৮
৭। মুসলিম ১৯২৬, তিরমিযী ২৮৫৮, আবূ দাউদ ২৫৯৯, আহমাদ ৮২৩৭, ৮৭০০
৮। মুসলিম ৬৮৩, আহমাদ ২২০৪০, ২২১২৫
৯। আবূ দাউদ ২৫৭১
১০। আবূ দাউদ ২৬২৮, আহমাদ ২৭২৮২
১১। আবূ দাউদ ২৫৮৩, ২৫৮৪, তিরমিযী ১৬৯১, নাসায়ী ৫৩৭৪, দারেমী ২৪৫৭
১২। মুসলিম ৩৪২, ২৪২৯, আবূ দাউদ ২৫৪৯, ইবনু মাজাহ ২৪০, আহমাদ ১৭৪৭,দারেমী ৬৬৩, ৭৫৫
১৩। আবূ দাউদ ২৫৫১
১৪। আবূ দাউদ ১৬৬৩, আহমাদ ১০৯০০
১৫। আহমাদ ১৪৪৪৯, আবূ দাউদ ২৫৩৪
১৬। আবূ দাউদ ২৬৩৯
১৭। মুসলিম ১৩৪২, তিরমিযী ৩৪৪৭ আবূ দাউদ ২৫৯৯, আহমাদ ৬৩৩৮, দারেমী ২৬৭৩
১৮। মুসলিম ১৩৪৩, তিরমিযী ৩৪৩৯, নাসায়ী ৫৪৯৮, ৫৪৯৯, ৫৫০০, ইবনু মাজাহ ৩৮৮৮, আহমাদ ২০২৪৭, ২০২৫৭, দারেমী ২৬৭২
১৯। আবূ দাউদ ২৬০২, তিরমিযী ৩৪৪৬
২০। সহীহুল বুখারী ২৯৯৩, ২৯৯৪, আহমাদ ১৪১৫৮, দারেমী ২১৬৫, ২১৬৬, ২৬৭৪
২১। আবূ দাউদ ২৫৯৯, মুসলিম ১৩৪২, তিরমিযী ৩৪৪৭, আহমাদ ৬২৭৫, ৬৩৩৮, দারেমী ২৬৭৩
২২। সহীহুল বুখারী ১৭৯৭, ২৯৯৫, ৩০৮৪, ৪১১৬, ৬৩৮৫, মুসলিম ১৩৪৪, তিরমিযী ৯৫০, আবূ দাউদ ২৭৭০, আহমাদ ৪৪৮২, ৪৫৫৫, ৪৬২২, ৪৭০৩, ৪৯৪০, ৫২৭৩, ৫৭৯৬, ৬২৭৫, ৬৩৩৮, মুওয়াত্তা মালিক ৯৬০, দারেমী ২৬৮২
২৩। তিরমিযী ৩৪৪৫, ইবনু মাজাহ ২৭৭১
২৪। সহীহুল বুখারী ২৯৯২, ৬৩৮২, ৪২০৫, ৬৪০৯, ৬৬১০, ৭৩৮৬,মুসলিম ২৭০৪, তিরমিযী ৩৩৭৪, ৩৪৬১, আবূ দাউদ ১৫২৬ ইবনু মাজাহ ৩৮২৪ আহমাদ ১৯০২৬, ১৯০৭৮, ১৯১০২, ১৯১৫১, ১৯২৫৬
২৫। আবূ দাউদ ১৫৩৬, তিরমিযী ১৯০৫, ৩৪৪৮, ইবনু মাজাহ ৩৮৬২, আহমাদ ৭৪৫৮, ৮৩৭৫, ৯৮৪০, ১০৩৩০, ১০৩৯২
২৬। আবূ দাউদ ১৫৩৭, আহমাদ ১৯২২০
২৭। মুসলিম ২৭০৮, তিরমিযী ৩৪৩৭, ইবনু মাজাহ ৩৫৩৭, আহমাদ ২৬৫৭৯, ২৬৫৮৪, ২৬৭৬৫, দারেমী ২৬৮০
২৮। আমি (আলবানী) বলছি: হাদীসটির সনদে অঞ্জতা রয়েছে যদিও হাদীসটিকে হাকিম ও যাহাবী সহীহ্ আখ্যা দিয়েছেন আর আসকালানী হাসান আখ্যা দিয়েছেন। দেখুন “য’ঈফাহ্” (৪৮৩৭) । এর সনদটি দুর্বল হওয়ার কারন হচ্ছে যুবায়ের ইবনুল ওয়ালীদ। কারন তিনি মাজহূর (অপরিচিত)। হাফিয যাহাবীও “আলমীযান” গ্রন্থে তার মাজহূল হওয়ার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। আবূ দাউদ ২৬০৩ হাদীসটি এককভাবে শুধু আবূ দাউদে বর্নিত হয়েছে।
২৯। সহীহুল বুখারী ১৮০৪, ৩০০১, ৫৪২৯, মুসলিম ১৯২৭, ইবনু মাজাহ ২৮৮২, আহমাদ ৭১৮৪, ৯৪৪৭, ১০০৬৮, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৩৫, দারেমী ২৬৭০
৩০। সহীহুল বুখারী ১৮০১, ৪৪৩, ২০৯৭, ২৩০৯, ২৩৮৫, ২৩৯৪, ২৪৭০, ২৬০৩, ২৬০৪, ২৭১৮, ২৮৬১, ২৯৬৭, ৩০৮৭, ৩০৮৯, ৩০৯০, ৪০৫২, ৫০৭৯, ৫০৮০, ৫২৪৩, ৫২৪৪, ৫২৪৫, ৫২৪৬, ৫২৪৭, ৫৩৬৭, ৬৩৮৭, মুসলিম ৭১৫, তিরমিযী ১১০০, নাসায়ী ৪৫৯০, ৪৫৯১, আবূ দাউদ ৪৩৪৭, ৩৫০৫, ৩৭৪৭, ইবনু মাজাহ ১৮৬০, আহমাদ ১৩৭১০, ১৩৭৬৪, ১৩৮১৪, ১৩৮২২, ১৩৮৯৪, দারেমী ২২১৬
৩১। সহীহুল বুখরী ১৮০০, মুসলিম ১৯২৮, আহমাদ ১১৮৫৪, ১২৭০৬, ১৩১৯৪
৩২। সহীহুল বুখারী ৩৭১, ৯৪৭, ১৮৬৭, ১৮৮৫, ২১৩০, ২২২৮. ২২৩৫. ২৮৮৯. ২৮৯৩. ২৮৪৫, ৩০৮৫, ৩০৮৬, ৪১৯৭, ৪১৯৮, ৪২০১, ৫২১১, ৪২১২, ৪২১৩, ৫০৮৫, ৫০৮৬, ৫১৫৯, ৫১৬৯, ৫৩৮৭, ৫৪২৫, ৬৩৬৩, মুসলিম ১৩৪৫, ১৩৬৫, ১৩৬৮, তিরমিযী ১০৯৫, ১১১৫, ১৫৫০, ৩৯২২, নাসায়ী ৫৪৭, ৩৩৪২, ৩৩৪৩, ৩৩৮০, ৩৩৮১, ৩৩৮২, ৪২৪০, আবূ দাউদ ২০৫৪, ২৯৯৫, ২৯৯৬, ২৯৯৭, ২৯৯৮, ৩০০৯, ৩৭৪৪, ইবনু মাজাহ ১০৯, ১৯০৯, ১৯১৬, ১৯৫৭, ২২৭২, আহমাদ ১১৫৪১, ১১৫৭৭, ১১৬৫৮, ১১৬৭৬, ১১৮০৭, ১২০১৩, ১২১০১, ১২২০৫, মুওয়াত্তা মালিক ৯০৮, ১০২০, ১১২৪, ১৬৩৬, ১৬৪৫, দারেমী ২২০৯, ২২৪২, ২২৪৩, ২৫৭৫।
৩৩। সহীহুল বুখারী ২৭৫৮, ২৯৪৭, ২৯৪৮, ২৯৪৯, ৩০৮৮, ৩৫৫৬, ৩৮৮৯, ৩৮৫১, ৪৪১৮, ৪৬৭৩, ৪৬৭৬, ৪৬৭৮, ৬২৫৫, ৬৬৯০, ৭২২৫
৩৪। সহীহুল বুখারী ১০৮৮, মুসলিম ১৩৩৯, তিরমিযী ১০৭০, দাউদ ১৭২৩, ইবনু মাজাহ ২৮৯৯, আহমাদ ৭১৮১, ৭৩৬৬, ৮২৮৪, ৮৩৫৯, ৯১৮৫, ৯৩৭৪, ৯৮৪৮, ১০০২৯, মুওয়াজ মালিক ১৮৩৩
৩৫। সহীহুল বুখারী ৩০০৬, ১৮৬২, ৩০৬১, ৫২৩৩, মুসলিম ১৩৪১, ইবনু মাজাহ ২৯০০, আহমাদ ১৯৩৫, ৩২২১।