১) আবূ যার (রাঃ) বলেন যে, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল (সাঃ) কোন আমল
সর্ব উওম?’ তিনি বলেন, “আল্লাহর প্রতি বিশাস স্থাপন করা ও তাঁর পথে জিহাদ
করা’’। আমি বললাম, ‘কোন গোলাম (কৃতদাস) স্বাধীন করা সর্ব উওম?’ তিনি বললেন,
“যে তাঁর মালিকের দৃষ্টিতে সর্বশ্রেষ্ঠ ও অধিক মূল্যবান।” আমি বললাম, ‘যদি
আমি এ সব (কাজ) করতে না পারি।’ তিনি বললেন, “তুমি কোন কারিগরের সহযোগিতা
করবে অথবা অকারিগরের কাজ করে দেবে।” আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি
বলুন, যদি আমি (এর) কিছু কাজে অক্ষম হই (তাহলে কি করব)? তিনি বললেন, “তুমি
মানুষের উপর থেকে তোমার মন্দকে নিবৃও কর। তাহলে তা হবে তোমার পক্ষ থেকে
তোমার নিজের জন্য সাদকাহস্বরূপ।” (সহীহুল বুখারী ২৫১৮ ও মুসলিম ৮৪)
২) আবূ যার (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “তোমাদের মধ্যে
প্রত্যেকের প্রত্যেক (হারের) জোড়ের পক্ষ থেকে প্রাত্যহিক (প্রদেয়) সাদকাহ
রয়েছে। সুতরাং প্রত্যেক তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ বলা) সাদকাহ, প্রত্যেক তাহমীদ
(আলহামদু লিল্লাহ বলা) সাদকাহ এবং ভাল কাজের আদেশ প্রদান ও মন্দ কাজ থেকে
নিষেধ করা সাদকাহ। এ সব কাজের পরিবর্তে চাশতের দু’রাকআত নামায যথেষ্ট হবে।”
(মুসলিম ৭২০, আবূ দাউদ ১২৮৫১২৮৬)
৩) ঐ আবূ যার (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “আমার
উম্মতের ভালমন্দ কর্ম আমার কাছে পেশ করা হল। সুতরাং আমি তাদের ভাল কাজের
মধ্যে ঐ কষ্টদায়ক জিনিসও পেলাম, যা রাস্তা থেকে সরানো হয়। আর তাদের মন্দ
কর্মসমূহের তালিকায় ঐ কফও পেলাম, যার উপর মাটি চাপা দেওয়া হয়নি।” (মুসলিম
৫৫৩, ইবনু মাজাহ ৩৬৮৩)
*মাটি চাপা দেওয়ার কথা তিনি এই জন্য বলেছেন যে, সে যুগে মসজিদের মেঝে
মাটিরই ছিল। বর্তমানে পাকা মেঝে কাপড় অথবা পানি দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে।
৪) উক্ত বর্ণনাকারী থেকেই বর্ণিত, কিছু সাহাবা বললেন, “হে আল্লাহর রসূল!
ধনীরাই তো বেশী নেকীর অধিকারী হয়ে গেল। তারা নামায পড়ছে যেমন আমরা নামায
পড়ছি, তারা রোযা রাখছে যেমন আমরা রাখছি এবং (আমাদের চেয়ে তারা অতিরিক্ত কাজ
এই করছে যে,) নিজেদের প্রয়োজন-অতিরিক্ত মাল থেকে তারা সাহকাহ করছে।” তিনি
বললেন, “আল্লাহ কি তোমাদের জন্য সাদকাহ করার মত জিনিস দান করেননি?
নিঃসন্দেহে প্রত্যেক তাসবীহ সাদকাহ, প্রত্যেক তাকবীর সাদকাহ, প্রত্যেক
তাহলীল সাদকাহ, ভাল কাজ নির্দেশ দেওয়া সাদকাহ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা
সাদকাহ এবং তোমাদের স্ত্রী-মিলন করাও সাদকাহ।”
সাহাবাগন বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কেউ স্ত্রী-মিলন ক’রে নিজের
যৌনক্ষুধা নিবারন করে, তবে এতেও কি তার পুন্য হবে?’ তিনি বললেন, “কি রায়
তোমাদের, যদি কেউ অবৈধভাবে যৌন-মিলন করে, তাহলে কি তার পাপ হবে? (নিশ্চয়ই
হবে।) অনুরূপ সে যদি বৈধভাবে (স্ত্রী-মিলন করে) নিজের কামক্ষুধা নিবারন
করে, তাহলে তাতে তার পুন্য হবে।” (মুসলিম ১০০৬, আবূ দাউদ ১৫০৪,ইবনু মাজাহ
৯২৭)
৫) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, “প্রতিদিন যাতে সূর্য
উদয় হয় (অর্থাৎ প্রত্যেক দিন) মানুষের প্রত্যেক গ্রন্থির পক্ষ থেকে একটি
করে সাদকাহ রয়েছে। ( আর সাদকাহ শুধু মাল খরচ করাকেই বলে না ; বরং) দু’জন
মানুষের মধ্যে তোমার মীমাংসা করে দেওয়াটা সাদকাহ, কোন মানুষকে নিজ সওয়ারীর
উপর বসানো অথবা তার উপর তার সামান উঠিয়ে নিয়ে সাহায্য করাও সাদকাহ, ভাল কথা
বলা সাদকাহ, নামাযের জন্য কৃত প্রত্যেক পদক্ষেপ সাদকাহ এবং রাস্তা থেকে
কষ্টদায়ক জিনিস দূরীভূত করাও সাদকাহ।”
৬) এটিকে ইমাম মুসলিম আয়েশা (রাঃ) থেকেও বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “ আদম সন্তানের মধ্যে প্রত্যেক মানুষকে ৩৬০
গ্রন্থির উপর সৃষ্টি করা হয়েছে। (আর প্রত্যেক গ্রন্থির পক্ষ থেকে প্রদেয়
সাদকা রয়েছে।)
সুতরাং যে ব্যক্তি “আল্লাহু আকবার” বলল, ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বলল, ‘লা
ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল, ‘সুবহানাল্লাহ’ বলল, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলল, মানুষ
চলার রাস্তা থেকে পাথর, কাঁটা অথবা হাড় সরাল, কিম্বা ভাল কাজের আদেশ করল
অথবা মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করল, (এবং সব মিলে ৩৬০ সংখ্যক পুণ্যকর্ম করল, সে
ঐদিন এমন অবস্থায় সন্ধ্যা করল যে, সে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে দূর করে
নিল।” (সহীহুল বুখারী ২৯৮৯,২৭০৭ ও মুসলিম ৯০০৯)
৭) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সকাল অথবা
সন্ধায় মসজিদে যায়, তার জন্য আল্লাহ মেহমানের উপকরণ প্রস্তুত করেন। যখনই সে
সেখানে যায়, তখনই তার জন্য ঐ মেহমানের উপকরণ প্রস্তুত করা হয়।” (সহীহুল
বুখারী ৬৬২ ও মুসলিম ৪৬৭,৬৬৯)
৮) উক্ত আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “হে
মুসলিম নারীগন! কোন প্রতিবেশিনী যেন তার প্রতিবেশিনীর (উপঢৌকনকে) তুচ্ছ মনে
না করে; যদিও তা ছাগলের পায়ের ক্ষুর হক না কেন। (সহীহুল বুখারী ২৫৬৬ ও
মুসলিম ১০৩০)
৯) উক্ত আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
“ঈমানের সওর অথবা ষাটের বেশী শাখা রয়েছে। তার মধ্যে সর্ব উওম (শাখা) ‘লা
ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা এবং সর্বনিম্ন (শাখা) রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস
(পাথর, কাঁটা ইত্যাদি) দূরীভূত করা। আর লজ্জা ইমানের একটি শাখা।” (সহীহুল
বুখারী ৯ ও মুসলিম ৩৫)
১০) উক্ত আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
“একদা এক ব্যক্তি পথ চলছিল। তার খুবই পিপাসা লাগল। অতঃপর সে একটি কূপ পেল।
সুতরাং সে তাতে নেমে পানি পান করল। অতঃপর বের হয়ে দেখতে পেল যে , (ওখানেই)
একটি কুকুর পিপাসার জ্বালায় জিভ বের করে হাঁপাছে ও কাদা চাটছে। লোকটি (মনে
মনে) বলল, ‘পিপাসাহর তাড়নায় আমি যে পর্যায় পৌছেছিলাম, কুকুরটিও সেই পর্যায়
পৌছেছে।’ অতএব সে কূপে নামল তারপর তার চামড়ার মোজায় পানি ভর্তি করল। অতঃপর
সে তা মুখে ধরে উপরে উঠল এবং কুকুরটিকে পানি পান করাল। আল্লাহ তাআলা তার এই
আমল্কে কবুল করলেন এবং তাকে ক্ষমা করে দিলেন।”
সাহাবাগন বললেন, “হে আল্লাহর রসূল ! চতুষ্পদ জন্তর প্রতি দয়া প্রদর্শনেও
কি আমাদের সওয়াব হবে?’’ তিনি বললেন, “প্রত্যেক জীবের প্রতি দয়া প্রদর্শনে
নেকী রয়েছে।”
বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, “আল্লাহ তাআলা তার এই আমলকে কবুল করলেন। অতঃপর তাকে ক্ষমা করে জান্নাতে প্রবেশ করালেন।”
বুখারী-মুসলিমের আর এক বর্ণনায় আছে, “ কোন এক সময় একটি কুকুর একটি কুপের
চারিপাশে ঘোরা-ফিরা করছিল। পিপাসা তাকে মৃতপ্রায় করে তুলছিল। (এই অবস্থায়)
হঠাৎ বনী ঈস্রাঈলের বেশ্যাদের মধ্যে এক বেশ্যা তাকে দেখতে পেল। অতঃপর সে
তার চামড়ার মোজা খুলে তা হতে (কূপ হতে) পানি উঠিয়ে তাকে পান করাল। সুতরাং
এই আমলের কারনে তাকে ক্ষমা করা হল।” (সহীহুল বুখারী ২৩৬৩,১৭৪,২৪৬৬ ও
মুসলিম ২২৪৪)
১১) উক্ত আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “
আমি এক ব্যক্তিকে জান্নাতে ঘোরাফেরা করতে দেখলাম। যে (পৃথিবীতে) রাস্তার
মধ্যে হতে একটি গাছ কেটে সরিয়ে দিয়েছিল, যেটি মুসলমানদেরকে কষ্ট দিচ্ছিল।”
(সহীহুল বুখারী ৬৫৪,৭২১,৬৫১ , মুসলিম ৪৩৭, ৪৩৯,১৯১৪ )
অন্য এক বর্ণনায় আছে, “এক ব্যক্তি রাস্তার উপর পড়ে থাকা একটি গাছের
ডালের পাশ দিয়ে পার হল। সে বলল, “আল্লাহর কসম! আমি এটিকে মুসলিমের পথ থেকে
অবশ্যই সরিয়ে দেব; যাতে তাদেরকে কষ্ট না দেয়। সুতরাং তাকে (এর কারনে)
জান্নাতে প্রবেশ করানো হল।।”
বুখারী-মুসলিমের আর এক বর্ণনায় আছে, “একদা এক ব্যক্তি রাস্তায় চলছিল। সে
রাস্তার উপর একটি কাঁটাদার ডাল দেখতে পেল। অতঃপর সে তা সরিয়ে দিল। আল্লাহ
তাআলা তার এই আমলকে কবুল করলেন। এবং তাকে ক্ষমা করে দিলেন।”
১২) উক্ত আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “যে
ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওযু করল, অতঃপর জুম্মা পড়তে এল এবং মনোযোগ সহকারে
খুতবাহ শুনল, সে ব্যক্তির এই জুম্মা ও (আগামী) জুম্মার মধ্যেকার এবং
অতিরিক্ত আরো তিন দিনের (ছোট) পাপসমূহ মাফ করে দেয়া হল। আর যে ব্যক্তি
(খুতবাহ চলাকালীন সময়ে) কাঁকর স্পর্শ করল, সে অনর্থক কর্ম করল।” ( অর্থাৎ,
সে জুম্মার সওয়াব বরবাদ করে দিল)। (মুসলিম ৫৮৭, আবূ দাউদ ১০৫০,ইবনু মাজাহ
১০১০)
১৩) উক্ত আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন,
“মুসলিম বা মু’মিন বান্দা যখন ওযূর উদ্দেশে তার মুখমণ্ডল ধৌত করে, তখন
পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে প্রত্যেক সেই গোনাহ বের হয়ে যায়,
যা সে দুই চক্ষুর দৃষ্টির মাধ্যমে করে ফেলেছিল। অতঃপর যখন সে তার হাত
দুটিকে ধৌত করে, তখন পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে প্রত্যেক সেই
গোনাহ বের হয়ে যায়, যা সে উভয় হাত দ্বারা ধারণ করার মাধ্যমে করে ফেলেছিল।
অতঃপর যখন সে তার পা দুটিকে ধৌত করে, তখন পানির সাথে অথবা পানির শেষ
বিন্দুর সাথে প্রত্যেক সেই গোনাহ বের হয়ে যায়, যা সে তার দু’পায়ের চলার
মাধ্যমে করে ফেলেছিল। শেষ অবধি সমস্ত গোনাহ থেকে সে পবিত্র হয়ে বের হয়ে
আসে।” (মুসলিম ২৪৪, তিরমীয ২)
১৪) উক্ত আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
“পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুম্মা থেকে আর এক জুম্মা এবং এক রমযান থেকে আর এক
রমযান পর্যন্ত (সংঘটিত সাগীরা গোনাহ) মুছে ফেলে; যদি কবীরা গোনাহ থেকে
বেঁচে থাকা যায় তাহলে ( নয়তুবা নয়)।” (মুসলিম ২৩৩, তিরমীয ২১৪)
১৫) উক্ত আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
“আমি কি তোমাদেরকে এমন কাজ বলে দেব না, যা দ্বারা আল্লাহ তাআলা পাপসমূহকে
নিশ্চিহ্ন করে দেন এবং মর্যাদা বর্ধন করেন?” সাহাবাগন বললেন, ‘অবশ্যই বলুন,
হে আল্লহর রসূল ! তিনই বললেন “ কষ্টের সময় পূর্ণরূপে ওযু করা, মসজিদের
দিকে বেশি বেশি পদক্ষেপ করা ( অর্থাৎ দূর থেকে আসা) এবং এক নামাযের পর
দ্বিতীয় নামাযের অপেক্ষা করা। সুতরাং এই হল (নেকী ও সওয়াব) সীমান্ত পাহারা
দেওয়ার মত।” (মুসলিম ২৫১, তিরমীয ৫২)
১৬) আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “যে
ব্যক্তি দুই ঠাণ্ডা (অর্থাৎ, ফজর ও আসরের) নামায পড়বে , সে জান্নাতে প্রবেশ
করবে।”
(সহীহুল বুখারী ৫৭৪, মুসলিম ৬৩৫)
১৭) উক্ত আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
“যখন বান্দা অসুস্থ হয় অথবা সফরে থাকে, তখন তার জন্য ঐ আমলের মতই (সওয়াব)
লেখা হয়, যা সে গৃহে থেকে সুস্থ শরীরে সম্পাদন করত।” (সহীহুল বুখারী ২৯৯৬)
১৮) জাবের হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “প্রত্যেক নেকীর কাজ সাদকাহ স্বরূপ।” (সহীহুল বুখারী ৬০২১)
১৯) উক্ত জাবের হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “যে কোন মুসলিম কোন
গাছ লাগায়, অতঃপর তা থেকে যতটা খাওয়া হয়, তা তার জন্য সাদকাহ হয়, তা থেকে
যতটুকু চুরি হয়, তা তার জন্য সাদকাহ হয় এবং যে ব্যক্তি তার ক্ষতি করে,
সেটাও তার জন্য সাদকাহ হয়ে যায়।” (মুসলিম ১৫৫২)
২০) মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, “মুসলিম যে গাছ লাগায় তা থেকে কোন
মানুষ, কোন জন্তু এবং কোন পাখী যা কিছু খায়, তবে তা তার জন্য সাদকাহ হয়ে
যায়।” (সহীহুল বুখারী ২৩২০,মুসলিম ১৫৫২)
২১) উক্ত জাবের হতে বর্ণিত, যে বনু সালেমাহ মসজিদের নিকটে স্থান
পরিবর্তন করার ইচ্ছা করল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে এই সংবাদ পৌছল।
তিনি তাদেরকে বললেন, “আমি খবর পেয়েছি যে, তোমরা স্থান পরিবর্তন করে মসজিদের
নিকট আসার ইচ্ছা করছ?” তারা বলল, ‘হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ! আমরা
এর ইচ্ছা করেছি।’ তিনি বললেন, “হে বনু সালেমাহ! তোমরা তোমাদের (বর্তমান)
গৃহেই থাকো; তোমাদের পদচিহ্নসমূহ লেখা হবে। তোমরা আপন গৃহেই থাকো; তোমাদের
পদচিহ্নসমূহ লেখা হবে।” (মুসলিম) অন্য এক বর্ণনায় আছে, “ নিশ্চয় তোমাদের
প্রত্যেক পদক্ষেপের বিনিময়ে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি হবে।” (মুসলিম ৬৬৫)
২২) আবুল মুনযির উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, একটি
লোক ছিল। আমি জানি না যে, অন্য কারো বাড়ি তার বাড়ির চেয়ে দূরে ছিল। তা
সত্ত্বেও তার কোন নামায ছুটত না। অতঃপর তাকে বলা হল অথবা আমি (কা’ব) তাকে
বললাম যে, ‘তুমি যদি একটি গাধা কিনে আঁধারে ও ভীষন রোদে তার উপর সওয়ার হয়ে
আসতে, (তাহলে তা তোমার পক্ষে ভাল হত?)’ সে বলল, ‘আমি এটা পছন্দ করি না যে,
আমার বাড়ি মসজিদ সংলগ্ন হোক! কারন আমি তো এই চাই যে, (দূর থেকে) আমার পায়ে
হেঁটে মসজিদে যাওয়া এবং ওখান থেকেই পুনরায় বাড়ি ফিরা, সব কিছু যেন আমার
নেকীর খাতায় লেখা যায়।’ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) (তার কথা শুনে) বললেন, “আল্লাহ
তাআলা এ সমস্ত তোমার জন্য একএ করে দিয়েছেন।”
২৩) অন্য এক বর্ণনায় আছে, “নিশ্চয় তোমার জন্য সেই সওয়াবই রয়েছে, যার তুমি আশা করেছ।”(মুসলিম ৬৬৩, আবূ দাউদ ৫৫৭)
২৪) আবূ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ বিন ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “চল্লিশটি সৎকর্ম আছে তার মধ্যে উচ্চতম হল, দুধ
পানের জন্য (কোন দরিদ্রকে) ছাগল সাময়িকভাবে দান করা। যে কোন আমলকারী এর
মধ্যে হতে যে কোন একটি সৎকর্মের উপর প্রতিদানের আশা করে ও তার প্রতিশ্রত
পুরস্কারকে সত্য জেনে আমল করবে, তাকে আল্লাহ তার বিনিময়ে জান্নাত প্রবেশ
করাবেন।” (সহীহুল বুখারী ৬৬৩১)
২৫) আদী ইবনে হাতেম (রাঃ) বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, “তোমরা
জাহান্নাম থেকে বাঁচো ; যদিও খেজুরের এক টুকরাও সাদকাহ করে হয়। আর যে
ব্যক্তি এর সামর্থ্য রাখে না, সে যেন ভাল কথা বলে বাঁচে।”(সহীহুল বুখারী
৬০২৩,১৪১৩)
২৬) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ
তাআলা ঐ বান্দার প্রতি সন্তষ্ট হন, যে খাবার খায়, অতঃপর তার উপর আল্লাহর
প্রশংসা করে অথবা পানি পান করে, অতঃপর তার উপর আল্লাহর প্রশংসা করে।”
(মুসলিম ২৭৩৪)
২৭) আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “প্রত্যেক
মুসলমানের উপর সাদকাহ করা জরুরী।” আবূ মূসা (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘যদি সে
সাদকাহ করার মত কিছু না পায় তাহলে?’ তিনি বললেন, “সে তার হাত দ্বারা কাজ
করে (পয়সা উপার্জন করবে) অতঃপর তা থেকে সে নিজে উপকৃত হবে এবং সাদকাও
করবে।” পুনরায় আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, ‘যদি সে তাও না পারে?’ তিনি বললেন,
“যে কোন অভাবী বিপন্ন মানুষের সাহায্য করবে।”
আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, ‘যদি সে তাও না পারে?’ তিনি বললেন, “সে (অপরের)
ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকবে। [কারন, সেটাও হল সাদকাহ সরূপ।]” (সহীহুল বুখারী
১৪৪৫,৬০২২)