Tuesday, March 12, 2013

নামাজ

হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাযের উদ্দেশ্যে দণ্ডায়মান হও তখন (নামাযের পূর্বে) তোমাদের মুখমণ্ডল ধৌত কর এবং হাতগুলোকে কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও, আর মাথা মাসেহ কর এবং পাগুলোকে টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে ফেল।  [সূরা আল-মায়েদাহঃ ৬]

(স্মরণ কর) যখন আমি ফেরেশতাদের বলেছিলাম, তোমরা সবাই আদমকে সিজদা কর, তখন তারা সবাই সিজদা করলো, কিন্তু ইবলীস ছাড়া (সে সিজদা করলো না); সে ছিল (আসলে) জ্বীনদেরই একজন, সে তার মালিকের আদেশের নাফরমানী করলো (সূরা আল কাহাফ : ৫০)

আল্লাহ তাআলা বললেন, যাও (দূর হয়ে যাও এখান থেকে , তাদের মধ্যে) যারা তোমার(শয়তানের) আনুগত্য করবে, তোমাদের সবার শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম, আর (জাহান্নামের) শাস্তিও পুরোপুরি দেওয়া হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল:৬৩)

আল্লাহ তাআলা বলেন: "নিঃসন্দেহে নামাজ মানুষকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে"। (সূরা আল আনকাবূত - ৪৫)

তোমরা আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও। (বাকারাঃ ২৩৮)

মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাজে বিনয়ী, নম্র।(সূরা মুমিনুনঃ ১-২) 

আবু হুরাইরা (রাদি আল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- যখন আদম সন্তান সিজদার আয়াত পাঠ করে, অতঃপর সিজদা করে তখন শয়তান কাঁদতে কাঁদতে একপাশে সরে দাঁড়ায় এবং বলতে থাকে, হায় আমার পোড়া কপাল, আদম সন্তানকে সিজদা করার নির্দেশ দেওয়া হলো সে সিজদা করলো। ফলে তার জন্য জান্নাত, আর আমাকেও সিজদার নির্দেশ করা হয়েছিল কিন্তু আমি অস্বীকার করেছিলাম, তাই আমার জন্য জাহান্নাম। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান অধ্যায়)

আবু যুবাইর (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাদি আল্লাহু তাআলা আনহু) কে বলতে শুনেছি, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফরের মাঝখানে নামায বর্জন করাই হচ্ছে ব্যবধান। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান অধ্যায়)



তিনি (স) বলেছেন: “আমাদের দলভুক্ত হতে নামায তাদের আলাদা করে দেয় যারা নামায ছেড়ে দেয়, যারাই নামায ছেড়ে দিবে তারাই কাফির”। আত-তিরমিযী কর্তৃক বর্ণিত,২৬১; আলবানী কর্তৃক সহিহ হাদীস রূপে বর্ণিত।

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রাদি আল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, কোন কাজটি আল্লাহর নিকট বেশী প্রিয়? তিনি বললেনঃ সময়মতো নামাজ আদায় করা। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান অধ্যায়)

সবচেয়ে জঘন্য চোর হল যে তার নামাজে চুরি করে। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে নামাজে চুরি করে? তিনি বললেন, রুকু ও সিজদা পূরা করে না । (আহমাদ ৫/৩১০; সহীহ আল-জামে ৯৯৭)

কারো নামাজ ততক্ষণ পর্যন্ত সঠিক হবে না যতক্ষণ না রুকু এবং সিজদায় তার পিঠ সোজা করবে।” (আবু দাউদ ১/৫৩৩; সহীহ আল-জামে ৭২২৪)

আবু আব্দুল্লাহ আল-আশয়াবী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাথীদের নিয়ে নামাজ পড়লেন, অতপর তাদের সাথে বসে পড়লেন। এরই মাঝে একজন লোক মসজিদে প্রবেশ করল এবং নামাজ পড়তে শুরু করল। সে রুকু সিজদায় ঠোকর মারছিল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ “তোমরা কি একে দেখছ না? নামাজে ঠোকর মারছে, যেমন কাক রক্তে ঠোকর মারে। যে ব্যক্তি রুকু সিজদায় ঠোকর মারে সে হল ঐ ক্ষুধার্ত ব্যক্তির মত যে শুধু একটি দু’টি মাত্র খেজুর খায়, এতে তার কি হবে? (ইবনে খুজায়মা ১/৩৩২; দেখুন শায়খ আলবানী প্রণীত সিফাতু সালাতিন নবী, পৃ: ১৩১)


“হযরত যায়েদ ইবনে ওহাব হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত হুজাইফা (রা) এক ব্যক্তিকে দেখলেন সে রুকু সিজদা পূরা করছিল না। তিনি বললেন, তুমি নামাজই পড়নি। যদি তুমি এ অবস্থায় মারা যেতে তাহলে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দ্বীনের আওতায় তোমার মৃত্যু হতো না।” (বুখারী, ফতহুল বারী ২/২৭৪)

যে ব্যক্তি ইমামের পূর্বেই মাথা উঠায় তার কি এ ভয় করে না যে, আল্লাহ তাআলা তারা মাথাকে গাধার মাথায় রুপান্তরিত করে দিবেন।” (মুসলিম ১/৩২০-৩২১)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহবারা ছিলেন খুবই যত্নবান। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগে বেড়ে কোন কাজ করতেন না। তাদের একজন বারা’ ইবনে আযেব (রা) বলেন, তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পিছনে নামাজ পড়তেন। যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রুকু হতে সিজদায় যেতেন তখন তিনি মাটিতে তাঁর কপাল না লাগান পর্যন্ত আমাদের কেউ পিঠ নীচু করত না। এরপর আমরা সবাই সিজদায় যেতাম। (মুসলিমঃ ৪৭৪) 

হে লোক সকল! আমি কেবল নামাজ শুরু করেছি, সুতরাং তোমরা রুকু ও সিজদায় আমাকে আগে বেড়ে কিছু করো না।” (বায়হাকী ২/৯৩, ইরওয়াউল গালীল গ্রন্থে এ হাদীসটি হাসান বলে উল্লেখ করা হয়েছে)

ইমাম এই জন্যই নির্ধারণ করা হয়, যাতে তাকে অনুসরণ করা হয়, তার প্রতি তোমরা ইখতেলাফ করবে না। সুতরাং ইমাম যখন আল্লাহু আকবার বলবে তোমরাও “আল্লাহু আকবার” বলবে এবং যখন তিনি রুকূ করবেন তোমরাও রুকূ করবে এবং তিনি যখন “সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলবেন তখন তোমরা “রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ” বলবে আর ইমাম যখন সিজদাহ করবেন তোমরাও সিজদাহ করবে।)) [বুখারী ও মুসলিম]